Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ফের বিপুল আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান, প্রশ্নের মুখে আইনশৃঙ্খলা

দুষ্কৃতীর ডেরায় সরকারি পিস্তল, অবাক পুলিশও

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বাপির বাড়ি থেকে মোট পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং সেভেন এমএম ও এইট এমএম পিস্তলের ৫০৮ রাউন্ড গুলি মিলেছে।’’

ভাণ্ডার: উদ্ধার হয়েছে এমনই অস্ত্র। ছবি: তাপস ঘোষ

ভাণ্ডার: উদ্ধার হয়েছে এমনই অস্ত্র। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা 
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

বাড়ির ভিতরে ঢুকে তল্লাশি করতে করতে ট্রাঙ্ক খুলতেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন চন্দননগর কমিশনারেটের আধিকারিকরা। থরে থরে সাজানো বন্দুকের গুলি। সঙ্গে পাঁচটা আগ্নেয়াস্ত্র। তার মধ্যে আবার একটা সরকারি অস্ত্র কারখানায় বানানো পিস্তল। সোমবার রাতে এই বিপুল অস্ত্র-সহ চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর থেকে বাপি বিশ্বাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার চুঁচুড়া আদালত বাপিকে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়।

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বাপির বাড়ি থেকে মোট পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং সেভেন এমএম ও এইট এমএম পিস্তলের ৫০৮ রাউন্ড গুলি মিলেছে।’’

তদন্তকারীদের দাবি, বাপি রবীন্দ্রনগরের সমাজবিরোধী টোটন বিশ্বাসের সাগরেদ। তবে তার বিরুদ্ধে এতদিন দুষ্কৃতীমূলক কাজের অভিযোগ ছিল না। তার দাদা কেদার টোটনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই এলাকা দুষ্কৃতীদের ‘খাসতালুক’, এটা সকলের জানা। কিন্তু তাই বলে এমন অস্ত্রের রমরমা!

পুলিশের দাবি, রবীন্দ্রনগরে ছোট অস্ত্রাগার বানিয়ে ফেলেছিল টোটন-বাহিনী। মাস খানেক ধরে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বহরে পুলিশকর্তারাও অবাক। তাদের হিসেব বলছে, কার্বাইন-সহ আধুনিক অস্ত্র মিলিয়ে অন্তত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছশো গুলি উদ্ধার হয়েছে মাসখানেকের মধ্যে। সিপি বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা আরও অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ওখানে রয়েছে। সেগুলো খোঁজা হচ্ছে। পলাতক দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, সাড়ে তিন মাস আগে রবীন্দ্রনগরে টোটনের ডেরায় হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু দুষ্কৃতীরা তাদের গুলি ছোড়ে। এর পর থেকেই সেখানে দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ উঠেপড়ে লাগে। কয়েকজন সাগরেদ-সহ টোটন গ্রেফতার হয়। পুলিশকর্তাদের দাবি, সোমবার রাতে বাপিদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ ধৃতকে হাজির করিয়েছিল। সে দাবি করে, অপরিচিত এক যুবক মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ওই আগ্নেয়াস্ত্র তাকে রাখতে বাধ্য করেছিল। ভয়ে সে কাউকে কিছু জানায়নি। পুলিশ অবশ্য তার কথা বিশ্বাস করছে না। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ‘শত্রু’রা এলাকায় ঢুকলে তাদের খবর রাখার জন্য টোটন কিছু ছেলেকে রাখত। বাপি তেমনই এক ‘পাহারাদার’ ছিল।

পুলিশের বক্তব্য, অধিকাংশই আসে বিহারের মুঙ্গের থেকে ট্রেনপথে। তবে বাপির বাড়িতে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রর মধ্যে একটি নাইনএমএম পিস্তল রয়েছে, যেটি তৈরি ইছাপুর গান ফ্যাক্টরিতে। বিষয়টি পুলিশকে ভাবাচ্ছে। তারা জানায়, ওই কারখানায় তৈরি অস্ত্র পুলিশ ব্যবহার করে। টোটনের দলবলের হাতে তা কী ভাবে পৌঁছল, তা দেখা হচ্ছে। স্থানীয় ভাবেও অস্ত্র তৈরির বন্দোবস্ত রয়েছে কি না, অথবা ভিন জেলা থেকে সরবরাহ হচ্ছে কি না, পুলিশ তাও দেখছে। বছর খানেক আগে চন্দননগরের সাবিনারায় অস্ত্র কারখানার হদিস পাওয়া যায়। কয়েক বছর আগে ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাসেও অস্ত্র কারখানার হদিস মেলে।

শুধু টোটনই নয়, ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনের ঘটনায় নাগপুর থেকে ধৃত মহম্মদ আকবর ওরফে দোলের ডেরা থেকেও পুলিশ বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে। পুলিশের দাবি, মগরার বোরোপাড়ার বাসিন্দা আকবরের কাছ থেকে ১টি নাইন এমএম পিস্তল এবং দু’টি ওয়ান শটার ও ১০টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি, মূল ষড়যন্ত্রী শকুন্তলা যাদব ওরফে সমুদ্রির কথায় দিলীপকে মারার জন্য ভাড়াটে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আকবর। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে আকবর সে কথা স্বীকারও করে। সে জানায়, ওই কাজের জন্য সে এক লক্ষ

টাকা পেয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Criminal Ammunition Police Chinsura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy