Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Picnic

‘নিও নর্মালে’ বড়দিনের ছবিতে বদল

গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রের ছবিটাও ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দিনে সেখানে ডিজের তাণ্ডবে কান পাতা দায় হয়।

গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রের ভিতরে রান্না। নিজস্ব চিত্র।

গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রের ভিতরে রান্না। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১৭
Share: Save:

করোনা-আবহে বদলেছে অনেক কিছুই। এ বার ‘নিও নর্মাল’ পরিস্থিতিতে বড়দিনের ছবিতেও বডসড় বদল চোখে পড়ল। হাওড়া ও হুগলির পিকনিক স্পটগুলিতে এ দিন ভিড় তেমন ছিল না। লোকসমাগম কম ছিল দর্শনীয় স্থানগুলিতেও। গাড়ি করে পিকনিক করতে যাওয়ার যে ছবি প্রত্যেক বছর এই দিনটিতে লক্ষ্য করা যায়, তা এ দিন চোখে পড়েনি। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় মানুষ যে সতর্ক, এ দিনের ছবিই তা প্রমাণ করছে।

হাওড়া জেলার পিকনিক স্পটগুলিতে অন্য বছরের তুলনায় এ দিন ভিড় অনেক কম ছিল। ছিল পুলিশের নজরদারি। গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্রের ছবিটাও ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই দিনে সেখানে ডিজের তাণ্ডবে কান পাতা দায় হয়। এ দিন কিন্তু শব্দদানবের তাণ্ডব ছিল না। পুলিশও সতর্ক ছিল। ভিড় না জমানো এবং ডিজে ব্যবহার না করার জন্য মাইকে প্রচারও করা হয়। উলুবেড়িয়া থেকে পিকনিক করতে যাওয়া লিপিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘরে বসে একঘেয়ে লাগছিল। স্কুল বন্ধ। শিশুরা বাইরে বেরতে পারছে না। তাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে পিকনিক করতে এসেছি। গড়চুমুকের এই পরিবেশ বেশ ভাল লাগছে। ডিজে বাজছে না। কোন দূষণ নেই। এটা দেখে ভাল লাগছে।’’ একই মন্তব্য ধুলাগড়ের বাসিন্দা প্রদীপকুমার প্রামাণিকের।

উলুবেড়িয়া ফুলেশ্বর ডাক বাংলো পিকনিক স্পটে পিকনিক করতে আসা কয়েকজন ডিজে বাজালে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তখন তাঁরা ডিজে বন্ধ করে দেন। তবে ফুলেশ্বর ও গড়চুমুকে থার্মোকলের থালা ব্যবহার হয়েছে। হাওড়া গ্রামীন জেলার পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পিকনিক স্পটগুলিতে পুলিশের তরফে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সকলকে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। পিকনিক স্পটগুলিতে জীবাণুনাশক ছড়ানো হবে।’’

হুগলির গোঘাটে গড়মান্দারণে পিকনিক বন্ধ রেখেছে হুগলি জেলা পরিষদ। ওইপর্যটন কেন্দ্রের ইনচার্জ শ্যামসুন্দর পাত্র বলেন, “পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ হয়েছে গত ২৫ মার্চ থেকে। তখন থেকে টিকিট কাটা বন্ধ। এ বার যে পিকনিক করা যাবে না, তা নিয়ে নির্দেশিকাও এসেছে জেলা পরিষদ থেকে। ”

প্রত্যেক বছর এই সময় গড় মান্দারণে পিকনিক করতে আসে বহু মানুষ। তাঁদের নানা সাহায্য করতেন সংলগ্ন সিংরাপুরের বাসিন্দাদের অনেকে। বিনিময়ে খাবার জুটত। এলাকা সাফসুতরো করতে টাকাও দেওয়া হত তাঁদের। কিন্তু পিকনিক বন্ধ থাকায়, এ বার টাকা বা খাবার, কিছুই জুটছে না তাঁদের। ওই গ্রামের লক্ষ্মী রুইদাস, বিনা দাস, মিনতি দাসের আক্ষেপ, “পিকনিকের মরসুমে অধিকাংশ দিনই বাড়িতে রান্না করতে হয় না। ২৫ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি ছাড়াও প্রতি সপ্তাহের শনিবার-রবিবারগুলি কম করে ৩০-৪০টি পিকনিক পার্টি আসত। অন্য দিনগুলোতেও ১০-১৫ টি দল পিকনিক করতে আসত। ২৫ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারিতে কার্যত মেলা হত এখানে। এ বার পিকনিক বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছি। এলাকা পরিষ্কার করার জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকা বেতন দিয়ে কাজ করানো হত। এ বার উপার্জন নেই।” তাঁদের দাবি, “গড়মান্দারণ খুলে দিয়ে পিকনিকের অনুমতি দিক প্রশাসন।” বছর চল্লিশের চম্পা দাসের খেদ, “পিকনিকে আসা দলগুলির জন্য জল আনা, বাসন ধোয়া, বাটনা বাটার কাজ পাই আমরা। কিছু টাকা মেলে। খাবারও জোটে। এ বার কিছুই জোটেনি।’’

শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে ওই গ্রামের কিছু দুঃস্থ পরিবার পিকনিক করতে আসা দলগুলির বিভিন্ন কাজ করে দিত। বিনিময়ে কিছু মজুরি ও খাবার পেত। এ বছর সেই সুযোগ নেই।” তিনি জানান, অন্য বছর ২৫ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি গড়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয় গড় মান্দারণে। এ বার জেলা পরিষদের কোষাগারে সেই টাকা ঢুকল না।

তবে দ্বারকেশ্বর, মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদরের পাড়ে অনেকে পিকনিক করেন। সর্বত্রই মদ্যপান নিয়ে বিশেষ সতর্ক করা হয়েছে সকাল থেকেই। চাঁদুর ফরেস্টেও পিকনিক হয়। সেখানে দু’টি দল ডিজে এনেছিল। পুলিশ এবং বনকর্মীরা সজাগ থাকায় সে দু’টি বাজানো হয়নি।

শ্রীরামপুরের দ্বিশতবর্ষ প্রাচীন সেন্ট ওলাভ গির্জায় সকালে বিশেষ প্রার্থনা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গির্জার ভিতরে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার এ বার ছিল না।

অন্য বিষয়গুলি:

picnic Christmas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy