সচিত্র পরিচয়পত্র দেখানোর পরে মিলছে অনুমতি। বাঁকড়ায় ছবিটি তুলেছেন রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
কোথাও জটলা দেখলেই লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করা। কোথাও ভোটারদের বাধা দেওয়া হচ্ছে জানতে পেরে সেখানে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে করে এনে শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সোমবার হাওড়ার জগৎবল্লভপুর, ডোমজুড় ও সাঁকরাইলে এমন ছবি বার বার দেখা গেল। যার জেরে দিনের শেষে অনেক ভোটারকেই বলতে শোনা গেল, এটাই তো তাঁরা চেয়েছিলেন। ভোটারদের সেই চাওয়া রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটে প্রায় পূরণ করে দিল নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের এমন ভূমিকায় বিরোধীরা সন্তুষ্টির কথা জানালেও জেলার বেশ কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনা সরব শাসক দল।
বেলা ১২টা। জগৎবল্লভপুর এলাকায় কমিশনের কর্তাদের কাছে খবর এল, শঙ্করহাটি ২ পঞ্চায়েতের ১২১ নম্বর বুথের ভূপতিপুর মল্লিকপাড়ার শ’খানেক ভোটারকে বুথে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়েই সেখানে রওনা দিল ‘কুইক রেসপন্স টিম’। অভিযোগের সত্যতাও খঁজে পাওয়া গেল। দ্রুত ভোটারদের কাছে গিয়ে তাঁদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বললেন কমিশনের লোকজন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। একটু পরেই ভোটাররা কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় পৌঁছে গেলেন ভূপতিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভোট দিয়ে অবশ্য তাঁরা নির্বিঘ্নেই বাড়ি ফিরলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার জানালেন, ‘‘ভেবেছিলাম, হয়তো এবার আর ভোট দিতে পারব না। কিন্তু যাই হোক নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় ভোটটা দিতে পারলাম।’’ তবে ফের তাঁদের উপর হামলার আশঙ্কা যে যায়নি তা জানাতে ভুললেন না তিনি। অবশ্য ভিন্ন সুরও বেজেছে। ওই এলাকারই আর এক ভোটার হুমকি সত্ত্বেও বের হয়েছিলেন ভোট দিতে। ভোট দিয়ে ফেরার পথে রাস্তায় জওয়ানদের দেখে প্রতিবেদককে জানালেন, ‘‘ভয় করছিল ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা জেদের বশে বেরিয়ে পড়ি। রাস্তায়, ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দেখে আরও ভরসা পেলাম।’’
ডোমজুড় বিধানসভার অন্তর্গত বাঁকড়া হাই (সাং) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া ভোটারদের বুথের ধারাকাছে ঘেঁসতে দিচ্ছে না। রোদে ঘেমেনেয়ে একশা হয়েও ভোটারদের লম্বা লাইন বুথের বাইরে। সামান্য বেচাল দেখলেই সিআরপিএফ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছে। লাঠি পেটাও করেছে। বুথে এতটাই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল যে সংবাদমাধ্যমের লোকেদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ডোমজুড়ের দক্ষিণ জয়পুরের ২০৪ ও ২০৫ নম্বর বুথ এলাকায় থাকা তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে হাজির হন প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, জনা পাঁচেক ছেলে বসেছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে তৃণমূল কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। কয়েকজন পড়ে গিয়ে জখমও হয়েছেন। অথচ কিছু দূরেই বিরোধীদের ক্যাম্প অফিসে ছ’জনের বেশি লোক থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুই বলেনি। যদিও পক্ষপাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা।
এদিন প্রায় শখানেক বুথে প্রথম দু’ঘণ্টা নির্দল প্রার্থী প্রতিমা দত্তের নির্বাচনী এজেন্টরা ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। কারণ ওই সব বুথের প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে প্রতিমা দেবীর নির্বাচনী এজেন্টের নমুনা সই মিলছিল না। ফলে প্রিসাইডিং অফিসার তাঁদের বুথে ঢুকতে দেননি। পরে প্রার্থী বুথে বুথে গিয়ে সই করার পর তাঁর বুথ এজেন্টরা বুথে ঢোকেন। প্রতিমা দেবীর অভিযোগ, ‘‘নির্বাচন কমিশনের ভুলের কারণেই এটা ঘটেছে।’’ সব মিলিয়ে ভোট ভাল হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রতিমা দেবী অভিযোগ নিয়ে ওই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার শাশ্বতী দাসকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। জগৎবল্লভপুরে অবশ্য শাসক, জোট দু’পক্ষই ভোট ভাল হয়েছে জানিয়ে তারাই জিতবে বলে দাবি জানিয়েছে। জোটের সিপিএম প্রার্থী বৈদ্যনাথ বসু বলেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় আমাদের এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া তেমন সমস্যা হয়নি। ভোট ভালই হয়েছে। জিতব আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy