Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Industrial Area

পথ-কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে শিল্পাঞ্চলে, জোরালো হচ্ছে নির্বীজকরণের দাবি

‘ধ্যাঁতা’র ভয়ে লাঠি হাতে কাজে আসেন পরিচারিকা। সে তেড়ে এলে যাতে প্রতিরোধ করতে পারেন!

হুগলির বিভিন্ন শহরে অলিগলিতে এ দৃশ্য প্রতিদিনের।

হুগলির বিভিন্ন শহরে অলিগলিতে এ দৃশ্য প্রতিদিনের।

প্রকাশ পাল 
চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:২০
Share: Save:

‘ধ্যাঁতা’র ভয়ে লাঠি হাতে কাজে আসেন পরিচারিকা। সে তেড়ে এলে যাতে প্রতিরোধ করতে পারেন!

এমনিতে ‘ধ্যাঁতা’ শান্তশিষ্ট। কিন্তু বেপাড়ার লোক দেখলেই তার মেজাজ তিরিক্ষি! একটানা চেঁচাতে থাকে। তেড়ে যায়। দু’-এক জন তার কামড় পর্যন্ত খেয়েছে। তাই, ওই পরিচারিকার মতো অনেকেই ‘ধ্যাঁতা’কে ডরান।

‘ধ্যাঁতা’ শ্রীরামপুরের মাহেশের একটি গলির পথ-কুকুর। কখনও আরও কিছু কুকুর তার সঙ্গে শামিল হয়। এমন সারমেয়র দল এ পাড়া-সে পাড়ায় কম নেই। তাদের জন্য নাজেহাল সাধারণ মানুষ। অথচ, কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে সরব বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন। সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর এবং প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকদের কাছে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে চন্দননগরের একটি সংগঠন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তারা জানিয়েছে, কত মানুষকে কুকুরের কামড় খেতে হয়। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কুকুরের নির্বীজকরণের দাবি জানিয়েছে তারা। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে জেলা সভাধিপতি এবং চন্দননগরের পুর কমিশনারকে।

সংস্থার সভাপতি বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুকুর কামড়ালে সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, এই কাজে শুধু হুগলি জেলাতেই কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এই টাকা কুকুরের নির্বীজকরণে খরচ করলে এমন সমস্যা আর থাকবে না। রাজকোষের টাকা বাঁচবে।’’

ওই সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, কুকুরের বংশ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না-থাকায় সমস্যা বেড়ে চলেছে। কুকুরের দাপটে অনেক পাড়ায় বা অলি-গলিতে হাঁটাচলা দুষ্কর। রাতে তাদের চিৎকারে ঘুমও উবে যায়। শুধু তা-ই নয়, হুগলি ‘নির্মল’ জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু কুকুর পথেঘাটেই মলত্যাগ করে। সেই বিষ্ঠা পড়েই থাকে। ফলে, পরিবেশ দূষিত হয়। এই দিকটিও সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ভাবেন না।

বিশ্বজিৎবাবু জানান, স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান থেকে তাঁরা জেনেছেন, ২০১৯ সালে মোট ৪০ হাজার ৩৫৭ জন কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা করাতে জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। অর্থাৎ, প্রতি মাসে এই সংখ্যা গড়ে প্রায় ৩৩৬৪ জন এবং দৈনিক প্রায় ১১২ জন। এর বাইরেও অনেকে বাইরে থেকে ইঞ্জেকশন নেন। ওই সংগঠনের সদস্যদের আরও বক্তব্য, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় পরিস্থিতির শিকার হতে হয় পথ-কুকুরদেরও। চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু মানুষ তাদের লাঠিপেটা করতে বা গায়ে গরম জল ছুড়তেও দ্বিধা করেন না। বছরখানেক আগে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে ষোলোটি কুকুর শাবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় তো‌লপাড় হয়। বছর চারেক আগে শ্রীরামপুরের জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ী রোডে চারটি পথ-কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে থানা-পুলিশ হয়।

এ সবের পাশাপাশি বেঁচেবর্তে থাকতে পথ-কুকুরকে আরও নানা ভাবে লড়াই করতে হয়। শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকতে হয়। অসুস্থ বা জখম হলে তাদের চিকিৎসা হয় না। বিশ্বজিৎবাবুদের দাবি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর বা পুরসভা-পঞ্চায়েতগুলি পথ-কুকুরদের নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করুক, যাতে সাধারণ মানুষ যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচেন। সর্বোপরি, অবলা এই জীবও ভাল ভাবে বাঁচতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Industrial Area Street Dogs Sterilization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE