Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
নোটবন্দির তিন বছর পার

ব্যাঙ্কের লাইনে মৃত সনতের পরিবারের খোঁজ নেয় না কেউ

এখন প্রতিবন্ধী দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান হয় কল্পনার। নিজে একফালি মুদি দোকান চালিয়ে এবং মেয়ের পরিচারিকার কাজে পাওয়া সামান্য টাকায় কোনওমতে চলে সংসার।

সনৎবাবুর ছবি হাতে স্ত্রী ও ছেলেরা । নিজস্ব চিত্র

সনৎবাবুর ছবি হাতে স্ত্রী ও ছেলেরা । নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

নোটবন্দির পরে কেটে গেল তিন বছর। এখন আর উলুবেড়িয়ার সনৎ বাগের পরিবারের খোঁজ নেয় না কেউ!

অথচ মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ধর্না দিয়েছিল তৃণমূল। শ্রাদ্ধের খরচ এবং দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে ঘর করে দিয়েছিল পঞ্চায়েত। মেয়ের বিয়ে দিতে আর ঘর সারাতে গিয়ে সেই টাকা শেষ। এখন প্রতিবন্ধী দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান হয় কল্পনার। নিজে একফালি মুদি দোকান চালিয়ে এবং মেয়ের পরিচারিকার কাজে পাওয়া সামান্য টাকায় কোনওমতে চলে সংসার।

উলুবেড়িয়ার রাজাপুর বাসুদেবপুরের বাসিন্দা, দিনমজুর সনৎ ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। মেয়ের বিয়ের পাকা দেখার জন্য টাকা তুলতে ভোরবেলায় দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ব্যাঙ্কের লাইনে। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটা ছিল ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তার কিছু দিন আগে, ৮ নভেম্বর নোটবন্দির কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কল্পনা বলেন, ‘‘আগের দু’দিন ব্যাঙ্কে গিয়েও টাকা পাননি। তাই ওই দিন ভোরেই ব্যাঙ্কে ছুটেছিলেন দু’হাজার টাকা তুলতে। নোটবন্দির জন্যই ওকে হারাতে হল।’’ ঘরের দাওয়ায় বসে কাপড়ের খুঁটে চোখ মোছেন তিনি। বলেন, ‘‘দিল্লির সরকার সে দিন গরিব মানুষের কথা ভাবেনি। ভাবলে, মানুষটাকে এ ভাবে হারাতে হত না। নোটবন্দিতে কার কী লাভ হল জানি না। আমাদের কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল!’’

কল্পনা জানান, তাঁদের পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে। সনৎ তিন মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে কল্পনা আর এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে হাওড়ায় পরিচারিকার কাজ করেন। সংসারের জোয়াল টানতে কল্পনা নিজেও পরিচারিকার কাজ করেছেন বেশ কিছু দিন। শরীরে না কুলনোয় এখন বাড়িতেই একটা মুদি দোকান চালান। তবে বিক্রিবাট্টা তেমন হয় না। কল্পনার কথায়, ‘‘খুব কষ্টে আছি।’’ দুই ছেলে বাপন আর তপন মানসিক প্রতিবন্ধী। তারা স্কুলে পড়ে। বাবার প্রসঙ্গ উঠলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তপন-বাপন। কল্পনা বলেন, ‘‘ওদের বোধবুদ্ধি তেমন হয়নি। বাবার মৃত্যুতে কতটা ক্ষতি হয়েছে, আজও বুঝে উঠতে পারেনি।’’

বিজেপি এবং তৃণমূল— উভয় দলই জানিয়েছে, তারা ওই পরিবারের পাশে আছে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভূল নীতির জন্য একটা প্রাণ চলে গেল। রাজ্য সরকার ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। পরিবারটি এখন কেমন আছে, খোঁজ নেব। প্রয়োজনে আবার পাশে দাঁড়াব।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপির সভাপতি অনুপম মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘নোটবন্দির সুফল মানুষ পেয়েছে। তাই বাসুদেবপুরের মানুষ তৃণমূলের হাত থেকে পঞ্চায়েত চালানোর দায়িত্ব বিজেপিকে দিয়েছে। ওই পরিবারকে নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করেছে। আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetization Sanat Bag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy