দাবি ৫৮ কোটির। মেরেকেটে হয়তো পাওয়া যাবে ২ কোটি। জেলার সমবায় ব্যাঙ্কগুলিতে চাষিরা নগদ টাকার জন্য প্রতিদিন হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কিন্তু মিলছে কই?
নগদের ধাক্কায় রাজ্যের প্রধান আলু উৎপাদক জেলা হুগলির এবার টালমাটাল পরিস্থিতি। অন্যান্য বছরে ইতিমধ্যেই জমি তৈরি করে আলু লাগানো শুরু হয়ে যায়। কিন্তু টাকার জোগানের অভাবে এ বার তা ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। সময়নির্ভর এই চাষে পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেবেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন চাষিদের কাছে। রাজ্যের আলু উৎপাদক জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। প্রতিটি জেলাতেই কম বেশি একই সমস্যায় চাষিরা।
হুগলি জেলায় কৃষি সমবায় সমিতির সংখ্যা ৩৭২টি। জেলার অন্তত ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কৃষক চাষের প্রয়োজনে সরাসরি সমবায় সমিতিগুলির উপর নির্ভরশীল। প্রতিবার সময়ে ঠান্ডা পড়ছে না বলে আক্ষেপ করেন চাষিরা। আশঙ্কা থাকে চাষ নষ্ট হওয়ার। কিন্তু এ বার যথাসময়ে ঠান্ডা হাজির। চাষের উপযুক্ত পরিবেশও তৈরি। অথচ পরিস্থিতির এমনই সমাপতন যে চাষির হাতে এ বার টাকাই নেই আলু বীজ কেনার।
সমবায় সমিতির কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের কাছে দরবার করছি বারে বারে। কিন্তু ওঁদের সাফাই, টাকার জোগান নেই। সবাই একই সঙ্গে টাকা চাইছে। না থাকলে দেব কোথা থেকে!’’ এমতাবস্থায় জেলা সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তারা অন্যভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খড়কুটো বই কিছুই নয়, বলছেন চাষিরা। পুড়শুড়ার কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের আগাম সার এবং আলুর ধসা রোগ প্রতিরোধের জন্য ওষুধ তোলা ছিল। আমরা তা চাষিদের মধ্যে বিলিয়েও দিয়েছি। কিন্তু চাষিরা বলছেন, তাঁদের হাতে তো আলু বীজ কেনার টাকাই নেই। তাই সার আর ওষুধ নিয়ে কি হবে?’’
অন্য এক সমবায়ের কর্তা অবশ্য জানান, এ বার তাঁরা হুগলির সাতটি সমবায়ে আলুর বীজ উৎপাদন করেছেন। সেই সার্টিফায়েড বীজ তাঁরা তাঁদের চাষিদের মধ্যে বিলিয়েছেন। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে ওই বীজ সার্বিক প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। তবু সমস্যা মেটাতে যতটুকু করার তা করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সমবায়েরই এক কর্তার পরিসংখ্যান, হুগলিতে আলুর মরসুমে প্রতিবার ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকা চাষে খরচ হয়। নোট-কান্ডের জেরে এ বার ইতিমধ্যেই চাষে অনেক দেরি হয়েছে। তাই পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। আলুর সময় চলে গেলে নগদ টাকা এসেও তখন কোনও লাভ হবে না চাষিদের।
হুগলি জেলা কৃষি সমবায়ের কর্তা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এখনও আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বারে বারেই টাকার জন্য ব্যাঙ্কগুলির কাছে দরবার করছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আশা করছি আমরা। তাতে আলুর পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে, ততটা নাও হতে পারে।’’ যদিও বিরুদ্ধ মতও শোনা গিয়েছে। সমবায়ের অন্য এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এক সপ্তাহের কথা আমরা অনেকদিন ধরেই শুনছি। হাতে টাকা পেলে বুঝব পেলাম। এখনও পর্যন্ত এটা স্পষ্ট, এই মরসুমে আলু চাষ অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে।’’
এই অবস্থায় টাকার জোগান নিয়ে সমবায় কর্তাদের দাবি, পাল্টা দাবিতে ঘুরপাক খাচ্ছে চাষিদের ‘আলু-ভাগ্য’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy