অসচেতনতায়: কারখানার এই দূষিত জলই খাল হয়ে মিশছে দামোদরে। নিজস্ব চিত্র
খালের জল যেখানে নদীতে মিশেছে সেই সংযোগস্থলে খাল আর নদীর জলের রঙের পার্থক্যটা খালি চোখেই দেখা যায়। খালের জল গাড় কমলা। আর নদীর জল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। আর মাঝের অংশটা কেমন িমলেমিশে আছে। এমন ছবি দেখা যাবে উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায়।
গুজারপুর খাল এসেছে আমতা থেকে। তারপরে উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের জোয়ারগড়িয়া, তুলসিবেড়িয়া, সুমদা, মুর্গাবেড়িয়া, মাধবপুর গ্রাম পেরিয়ে মিশেছে মহিষরেখার দামোদরে।
মাধবপুর ও কাশ্যপপুর দু’টি গ্রামের সীমানায় তৈরি হয়েছে লোহার পাইপ তৈরির কারখানা। সেই কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রিত জল এসে পড়ছে খালে। খালের জল আবার মিশছে দামোদরে। ফলে খালের জল যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনই রেহাই পাচ্ছে না দামোদরও।
লোহার পাইপ তৈরির কারখানাটি তৈরি হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। অভিযোগ, বর্জ্য শোধন করার যথেষ্ট ব্যবস্থা না করেই চালু হয়ে যায় উৎপাদন। তার ফলে দূষণ আটকানো যায়নি। মূলত মুর্গাবেড়িয়া, কাশ্যপপুর এবং মাধবপুরে খালের ধারে বসবাসকারী তিনটি গ্রামের মানুষ এই দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাসিন্দারা জানান, এই খালে এক সময়ে প্রচুর মাছ মিলত। বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনে তা ধরতেন। অনেক মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ এই খাল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দামোদর থেকে প্রচুর চিংড়ি এসে খালে উঠত। তা ধরতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কারখানাটি চালু হওয়ার পর থেকে সব বন্ধ। খালের জল দূষিত হয়ে যাওয়ায় মাছের আর দেখা মেলে না।
শুধু তাই নয়, খাল যেখানে দামোদরে মিশেছে সেই এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত দামোদরেও মাছ নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূষণই এর মূল কারণ।
এই খালের ধারে বসবাস করেন কয়েকশো পরিবার। তাঁরা একসময়ে খালের জল ব্যবহার করে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেন। বাসন মাজতেন, স্নান করতেন এমনকি এই জলে রান্নাও হত। কিন্তু দূষণের জেরে
সব বন্ধ।
কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যমিশ্রিত জল খালে পড়ার ফলে খালের জল হয়ে গিয়েছে গাঢ় কমলা রঙের। তা থেকে কটু গন্ধও ছড়ায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওই জল ব্যবহারের ফলে অনেকই চর্মরোগেও আক্রান্ত হয়েছেন।
বাসিন্দারা জানান, রাসায়নিক মিশ্রিত জল খালে ফেলা হয় পনেরো দিন অন্তর। বর্ষার সময়ে দামোদরে জল যখন বেশি থাকে তখন জোয়ারের ঠেলায় খালের দূষিত জল অনেকটা পিছিয়ে যায়। তখন জল অনেকটা পরিষ্কারও হয়ে যায়। কিন্তু শীত ও গ্রীষ্মে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যায়। সেই সময়ে দামোদরে জল কম থাকে। ফলে জোয়ার হলেও তার জল খাল পর্যন্ত উঠতে পারে না। অ্যাসিড রাসায়নিক মেশানো দূষিত জল খালেই পড়ে থাকে থাকে দিনের পর দিন।
শুধু তাই নয়, সেই জল নিয়মিত দামোদরে মেশে। অথচ জাতীয় পরিবেশ আদালত নদীর দূষণ রোধ করা নিয়ে সতর্ক করেছে। অথচ মহিষরেখায় এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে।
কারখানার সামনের অংশ মুম্বই রোডের দিকে। পিছনের অংশটি কাশ্যপপুর ও মাধবপুরের সংযোগস্থলে। কারখানার পিছনে গেলে দেখা যায়, প্রায় ১০ ফুট চওড়া নালার মধ্য দিয়ে রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত জল পাঁচশো ফুট দূরে গিয়ে পড়ছে গুজারপুর খালে। দূষিত জল যাওয়ার ফলে নালার দুই দিক মরচে পড়া লোহার মতো হলুদ হয়ে গিয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার দূষণ বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
এই কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। মাধবপুরের পরিবেশকর্মী জয়িতা কুণ্ডু বলেন, ‘‘মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হোক, এটা আমরা চাই না। কিন্তু দূষণ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। না হলে এবার আমরা গ্রামবাসীদের নিয়ে আন্দোলনে নামব।’’
উলুবেড়িয়া-১-এর বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি বাসিন্দাদের কাছ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি দূষণ রোধে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। উত্তর পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানান, ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) মাধ্যমে সব রাসায়নিক বর্জ্য নষ্ট করে ফেলা হয়। কোনও রাসায়নিক বর্জ্য কারখানার বাইরে বেরোয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy