চণ্ডীগড়ে শিবমন্দিরের শিলান্যাস। — নিজস্ব চিত্র
শিবমন্দির চেয়েছিলেন চিত্তবাবুরা। ইচ্ছাপূরণে পথে নেমেছিলেন মতিবুররা। সেই ‘সম্প্রীতির মন্দিরের’ শিলান্যাস হল শুক্রবার।
গ্রামের নাম উত্তর হাল্যান। বাগনানের এই গ্রামের পাঁচশো পরিবারের মধ্যে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা মেরেকেটে ৮০। বাকিরা মুসলিম। দুই সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে ২০০৮ সালে সেখানে তৈরি হয়েছিল অস্থায়ী একটি শিবমন্দির। সেখানেই শিবের পুজো চলত এত দিন। মন্দিরটি পাকা করার ইচ্ছা মনে পুষে রেখেছিলেন হিন্দুরা।
কিন্তু দরকার ছিল অনেক টাকা।
‘রোজ আনা রোজ খাওয়া’ ওই মানুষগুলির পক্ষে অত টাকা তোলা সম্ভব ছিল না। তাঁদের ইচ্ছার কথা জানতেই উপায় বার করলেন গ্রামেরই সৈয়দ মতিবুর রহমান, মুজিবুর রহমান, মুকার হোসেনরা। পাড়ার সকলকে নিয়ে তাঁরা ঝাঁপিয়েছিলেন অর্থ সংগ্রহে। হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাশের গ্রাম আয়মা হাল্যানের মুসলিমরাও।
সকলের সংগ্রহ করা অর্থে উত্তর হাল্যানে তৈরি হবে পাকা মন্দির। উত্তর হাল্যানের চণ্ডীগড় এলাকায় বাস করে হিন্দু পরিবারগুলি। সেখানকার বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিটি হিন্দু এলাকায় শিবমন্দির থাকে। আমাদের এখানে ছিল না। হাতেগোনা কয়েকঘর হিন্দু পরিবারের অধিকাংশই গরিব খেটে খাওয়া মানুষ। পাকা মন্দির তৈরির জন্য যত টাকা দরকার, তা জোগাড় করতে পারিনি। মুসলিম যুবকদের সহায়তায় এত দিন পরে সেই সাধ পূরণ হতে চলেছে।’’ তাঁর প্রতিবেশী সুজয় খাঁড়ার কথায়, ‘‘হিন্দু-মুসলিম সকলে এক হয়ে চাঁদা তুলেছি। এই মন্দির নিছক শুধু হিন্দুদের উপাসনার জায়গা নয়, এটা সম্প্রীতির নিদর্শন হয়ে থাকবে।’’
২০০৮ সালে তৈরি অস্থায়ী শিবমন্দিরে প্রত্যেক বছর শিবের পুজো হয়। তাতে স্বেচ্ছাসেবক হন মুসলিমরা। পাকা মন্দির তৈরির নেপথ্যে বড় ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সৈয়দ মতিবুর রহমান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেক বছর শিবরাত্রির সময়ে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মন্দিরের দেওয়াল রঙ করে দিই।’’ চিত্তবাবু বলেন, ‘‘মতিবুরদের কাছে আমরা পাকা মন্দির করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলাম। তারপরেই তাঁরা আমাদের সঙ্গে নিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পড়েন।’’ তিন বছর ধরে অর্থ সংগ্রহ চলে।
এ দিন মন্দিরের শিলান্যাস করতে এসে বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক অরুণাভ সেন বলেন, ‘‘আমিও সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা করেছি। দেশে যখন অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চলছে, তখন উভয় সম্প্রদায়ের এই উদ্যোগ একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এই মন্দিরের শিলান্যাস করতে পেরে আমি গর্বিত।’’ শিলান্যাসে হাজির ছিলেন এলাকার আরও দুই পঞ্চায়েত সদস্য ইরানি ইয়াসমিন এবং আব্দুল হাকিম। ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় সদস্য সমরেন্দু সামন্ত এবং উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। শিলান্যাসের আগে পুজো করেন চিত্তবাবু।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, উত্তর হাল্যান এবং আয়মা হাল্যান গ্রামে সম্প্রীতির চর্চা বহু পুরনো। সেখানে একটি দুর্গাপুজো হয়। পুজো উদ্যোক্তাদের সিংহভাগই মুসলিম। আবার মুসলিমদের উরস এবং কাওয়ালির অনুষ্ঠানে হিন্দুরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। ইয়াসমিন বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর বিসর্জনের দিন আমি আবির মাখি।’’ গ্রামবাসী পূর্ণিমা পাল বলেন, "মুসলিম ভাইদের সহযোগিতা না পেলে পাকা মন্দিরে পুজো দেওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy