পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার আগে লাইন উলুবেড়িয়ায়।—নিজস্ব িচত্র
বহু পরীক্ষার্থী মোটা টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে এসেছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। কেউ আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পাঁচ দিন আগে। তবে, শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি সকলেই। হাওড়া ও হুগলিতে নির্বিঘ্নেই মিটেছে ‘নিট’। দূরত্ব-বিধি বজায় রেখেই পরীক্ষা হয়েছে সব কেন্দ্রে।
কোচবিহারের দিনহাটার পরীক্ষার্থী উর্মিলা পরভিনের সিট পড়েছিল উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌছতে বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন গত বুধবার। যখন বেরিয়েছিলেন, তখনও শনিবারের লকডাউন প্রত্যাহারের ঘোষণা হয়নি। সেই ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার। রবিবার পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে উর্মিলা বলেন, ‘‘এই ঘোষণা আরও আগে হলে বুধবার বাড়ি থেকে বেরোতাম না। আরও দু’টো দিন পড়ার সুযোগ পেতাম।’’ তাঁর বাবা শাহজাহান আলি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে উদয়নারায়ণপুরে একটি মিশনের কার্যালয়ে পৌঁছই। ওখানেই তিন দিন ছিলাম।’’ এ দিন সকালে গাড়ি ভাড়া করে মেয়েকে নিয়ে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসেন ওই দম্পতি। শাহজাহানের ক্ষোভ, ‘‘লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা আগে ঘোষণা হলে এই ভোগান্তি হত না।’’
পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার জন্য সরকারি বা বেসরকারি বাসের উপরে নির্ভর করেননি বহু পরীক্ষার্থী। গাড়ি ভাড়া করে এসেছিলেন তাঁরা। অভিভাবকদের প্রশ্ন, এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিন পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে কি ট্রেন চালানো যেত না?
এ দিন সকালে উত্তরপাড়া স্টেশনে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন এক পরীক্ষার্থীর বাবা। ট্রেন চলাচল বন্ধ জেনেও কেন স্টেশনে? পরীক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘‘রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ ট্রেন মাঝেমধ্যে চলছে। মানকুণ্ডু যাব। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শহরতলির পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা কেন করল না রেল মন্ত্রক?’’
আরামবাগের খানাকুলের নতিবপুর, পিলখাঁ, কিংবা গোঘাটের নকুন্ডার মতো প্রত্যন্ত এলাকার অনেকেই ভাড়া করা গাড়িতে তাঁদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব ৮০-১০০ কিমি। এত পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য সরকারি বা বেসরকারি বাসের উপরে ভরসা রাখা যায় না। খানাকুলের নতিবপুর গ্রামের শিউলি জানার সিট পড়েছিল বাড়ি থেকে ৯০ কিমি দূরে, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কদমগাছি আদিত্য অ্যাকাডেমিতে। তাঁর বাবা সুকুমার জানা বলেন, “সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ভাড়া গাড়িতে চেপে বেরিয়েছিলাম। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছি ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ। ভাড়া লেগেছে ৩৫০০ টাকা।”
খানাকুলের পিলখাঁর মানস খামরুইয়ের সিট পড়েছিল তাঁর বাড়ি থেকে ৯৮ কিমি দূরে মুকুন্দপুরে ই এম বাইপাসের ধারে একটি কেন্দ্রে। মানসের বাবা প্রভাসবাবু বলেন, ‘‘যানজট এড়াতে সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলাম। গাড়ি ভাড়া পড়েছে ৩ হাজার টাকা।’’ গোঘাটের নকুন্ডা গ্রামের পিম্পা রায় পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁর বাড়ি থেকে ৯৫ কিমি দূরে হুগলির রাজহাটের কাছে একটি কেন্দ্রে। গাড়ি ভাড়া করতে তাঁর খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা।
এ দিন চুঁচুড়ায় দু’টি বেসরকারি স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে। চন্দননগর, মানকুণ্ডু ও পোলবার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে স্যানিটাইজ়েশনের ব্যবস্থা ছিল। ছিল মেটাল ডিটেক্টর। নবদ্বীপের বাসিন্দা সুজয় দাসের মেয়ের সিট পড়েছিল চুঁচুড়ার একটি কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘‘আমার সামান্য রোজগার। মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে আনার জন্য অনেক টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করেছি। পডুয়াদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কি সরকার নিতে পারত না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy