Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু তরুণীর, খুন করা হয়েছে?

বৃহস্পতিবার মেয়ের সঙ্গে কথা বলার পরে খবরটা এল শুক্রবার মাঝরাতে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পাড়ার দুই যুবক বাড়ি এসে জানালেন, তাঁদের মেয়ে মৌমিতা মণ্ডল (২৬) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।

অতীত: স্বামী শুভাশিস মণ্ডলের সঙ্গে মৌমিতা। নিজস্ব চিত্র

অতীত: স্বামী শুভাশিস মণ্ডলের সঙ্গে মৌমিতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

দু’দিন আগে মাকে ফোন করে মেয়ে বলেছিলেন, ‘‘মা খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার কোলে মাথা রেখে শুতে ইচ্ছে করছে।’’

মেয়ের কথা শুনে বুক ফেটে গেলেও তাঁর কাছে যাওয়ার উপায় ছিল না মায়ের। কারণ অভিযোগ, দাবি মতো পণ দিতে না পারায় বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই বাপের বাড়ির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেছিলেন মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বলতে ছিল মোবাইল ফোন। তাও লুকিয়ে-চুরিয়ে।

বৃহস্পতিবার মেয়ের সঙ্গে কথা বলার পরে খবরটা এল শুক্রবার মাঝরাতে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পাড়ার দুই যুবক বাড়ি এসে জানালেন, তাঁদের মেয়ে মৌমিতা মণ্ডল (২৬) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। মৃতদেহ হাসপাতালে রয়েছে। খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখেন, হাসপাতালে স্ট্রেচারে পড়ে রয়েছে বাড়ির ছোট মেয়ের মৃতদেহ। গোটা শরীরে মারধরের দাগ স্পষ্ট। এ দিকে মৃতদেহের আশপাশে কেন, হাসপাতাল চৌহদ্দির মধ্যেও দেখা নেই শ্বশুরবাড়ির লোকেদের।

ঘটনাটি লিলুয়ার বি রোডের ঘাটাপাড়ার। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর ছয়েক আগে লিলুয়ারই বামনগাছি রেল কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা মৌমিতার সঙ্গে পাশের পাড়ার ব্যবসায়ী বাড়ির ছেলে শুভাশিস মণ্ডলের বিয়ে হয়। তাঁদের একটি দু’বছরের কন্যা সন্তানও রয়েছে। মৃতার পরিজনেদের দাবি, ওই রাতে মৌমিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ওই দুই যুবককে দিয়ে খবর পাঠায় যে, তাঁদের মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মৃতদেহটি তারা নিজেরাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। ওই তরুণীর বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন হাওড়া হাসপাতালে ছুটে গিয়ে দেখেন, মৃতার শরীরের একাধিক জায়গায় অত্যাচারের চিহ্ন স্পষ্ট। এর পরেই শনিবার সকালে লিলুয়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার মা।

ওই বধূর বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী ব্রজগোপাল বণিক ও মা নমিতা বণিকের অভিযোগ, পণ কম দেওয়ার অভিযোগ তুলে শুভাশিসের পরিবার বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। প্রথম বছর মৌমিতাকে দু’-এক দিনের জন্য বাপের বাড়ি আসতে দিলেও তার পর থেকে তাঁর বাপের বাড়ি আসা বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমাঝে ফোনে যোগাযোগ ছাড়া মেয়ের সঙ্গে ছ’বছরে দেখা হয়েছে কম। কিন্তু টেলিফোনে যোগাযোগ থাকায় নমিতাদেবী জানতে পারছিলেন, টাকা না দিতে পারায় মেয়ের উপরে তীব্র মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ দিন নমিতাদেবী বলেন, ‘‘ওঁরা ওর উপরে অত্যাচার করছিল। মারধর করত। আমি অনেক বার চলে আসতে বলেছি। বাচ্ছাটাকে ছেড়ে আসতে চাইত না। এ ভাবে যে ওরা মেরে ফেলবে মেয়েটাকে, তা বুঝিনি!’’

মৃতা গৃহবধূর এক আত্মীয়ের বক্তব্য, ‘‘গত দু’মাস ধরে শুভাশিস প্রায়ই টাকা ও জিনিসপত্র চেয়ে মৌমিতাকে দিয়ে মাকে ফোন করাচ্ছিল। মৌমিতার বাবা যেহেতু কয়েক মাস আগে রেল থেকে অবসর নিয়েছেন, তাই অবসরের টাকার লোভেই অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছিল।’’

পুলিশ জানায়, ঘটনার পরেই ওই অভিযুক্ত পরিবারের লোকজন পালায়। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এ দিন ময়না-তদন্তের পরে মৃতদেহ নিয়ে ফেরার সময়ে ওই বধূর পরিজনেরা লিলুয়া থানার কাছে মৃতদেহ রাস্তায় নামিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। এই নিয়ে ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ চলে প্রায় আধঘন্টা। এর জেরে যানজটও হয়। পরে পুলিশ এসে ধৃতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mysterious Death Dowry Murder লিলুয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy