Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
আরামবাগের সব বাজার নিয়েই উদ্বেগে দমকল

আগুন ধরলে ভরসা মগের জল, ট্যাপকল

এক সপ্তাহ আগে পুড়ে গিয়েছিল দমদমের গোরাবাজার। উঠেছিল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। সেই ঘটনা থেকে আদৌ কি কোনও শিক্ষা নিয়েছে দুই জেলার বড় বাজারগুলি? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ নজরে আরামবাগ বাজার।

মাথার উপরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে তার। ছবি: মোহন দাস

মাথার উপরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে তার। ছবি: মোহন দাস

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৯
Share: Save:

হুঁশ ফিরছে না কিছুতেই!

দমকল উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পুরসভা প্রচার করছে। সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবু আরামবাগ শহরের বাজারগুলিতে অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও তিমিরেই। কিছুতেই আগুন মোকাবিলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এমনকী, কেনা হচ্ছে না অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রও!

এক সপ্তাহ আগেই এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে দমদমের গোরাবাজার। তার পর রাজ্যের বিভিন্ন বাজার অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলায় কতটা তৈরি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আরামবাগের ছোটবড় অন্তত ৩০টি বাজারের অবস্থা আগে যা ছিল, এখনও তা-ই। অধিকাংশ জায়গাতেই দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার মতো পরিসর নেই। বেশির ভাগ বাজারেই স্টোভ বা গ্যাস জ্বালিয়ে চা বা রান্না হয়। যত্রতত্র জটপাকানো বিদ্যুতের তার ঝুলছে। মিটার-ঘরগুলির অবস্থাও বিপজ্জনক।

শহরের ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং পুরসভার মার্কেট কমপ্লেক্সগুলির কোথাও যে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, সে কথা জানিয়ে দমকল বিভাগ দু’বছর ধরে মহকমা প্রশাসন এবং পুর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। দমকল বিভাগের আরামবাগের ওসি শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দমকল থেকে অগ্নি নিরাপত্তা বিধি মানা নিয়ে শহরের মার্কেট কমপ্লেক্সগুলিতে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয়নি।”

এখনও শহরের মার্কেট কমপ্লেক্সগুলিতে আগুন নেভাতে ভরসা শৌচাগারের জল বা পানীয় জলের ট্যাপকল। অনেক শৌচাগারেই আবার বালতি নেই। ভরসা মগ। আগুন লাগলে সেই মগের জলে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শহরের বাসিন্দাদেরই। শহর তথা মহকুমার শতাব্দীপ্রাচীন বাজারগুলির মধ্যে অন্যতম বড় আনাজ বাজার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘পুরাতন বাজার’। এটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন। মোট ৯০ জন ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন। মহকুমার প্রায় সব বাজারেই এখান থেকে আনাজ যায়। দুপুরে ঘণ্টাদুয়েক বাদ দিলে পাইকারি এবং খুচরো ক্রেতাদের ভিড় থাকে সবসময়। বাজারের বাইরেও দু’দিকের রাস্তার ধারে বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন অন্তত ১০০ জন। সব মিলিয়ে বাজারের সামনে ১২ ফুট চওড়ার পি সি সেন রোডটি সঙ্কীর্ণ হয়ে এখন ছ’ফুটের হয়েছে।

বাজারটির তদারকির দায়িত্বে থাকা হালদার পরিবারের সদস্য রুদ্রপ্রসাদ হালদার মানছেন, ‘‘আগুন লাগলে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যাবে বাজার।’’ তা হলে ব্যবস্থা নেই কেন? রুদ্রপ্রসাদবাবুর জবাব, ‘‘পুরসভার কাছে জলের ব্যবস্থার আবেদন করেও পাওয়া যায়নি। অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র কিনে কী ভাবে ব্যবহার করব জানি না। কেউ জানাতে আসেননি। আমরা আতঙ্কে আছি।”

একই রকম অব্যবস্থার চিত্র শহরের ‘বিজয় মোদক সুপার মার্কেট’, ‘নজরুল মার্কেট’, ‘সুকান্ত মার্কেট’, হাসপাতাল রোডের ‘পুরসভা সুপার মার্কেট’, ‘বি কে রায় সুপার মার্কেট’-এরও। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা আরামবাগ বাসস্ট্যান্ডের উপর তিনতলা ‘বিজয় মোদক সুপার মার্কেট’-এ দেড়শোরও বেশি দোকান রয়েছে। দোতলায় দু’টি হোটেল ছাড়াও একাধিক জরির দোকান-সহ নানা দাহ্য বস্তুর দোকান রয়েছে। কিন্তু তার ভিতরেই স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না হয়। ব্যবসয়ীরা ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে পারলেও একজনও দমকলের বৈধ শংসাপত্র দেখাতে পারেননি।

মহকুমা প্রশাসনও মানছে, বাজারগুলিতে কোথাও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডেকে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে পরিকল্পনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা। পুরপ্রধান স্বপন নন্দী বলেন, “দমকলের নির্দিষ্ট ছাড়পত্র নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাও আগুন বিধি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছি। পুরসভার বাজারগুলিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু কবে থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ হবে, মিলছে না উত্তর।

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh fire fire accident fire accident prone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy