Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

হোম ছেড়ে স্বামীর সুখী গৃহকোণে প্রমীলা, আরতি

হোম থেকে সুখী গৃহকোণ। পেশায় গাড়ির চালক সঞ্জয় ও সমীরের হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ করলেন আরতি ও প্রমীলা। হাওড়ার পাঁচলার জুজারসাহা মালিপুকুরে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি হোমে প্রায় টানা ছয় বছর ধরে আশ্রিত আরতী বর্মা এবং প্রমীলা কুমারী। অবশেষে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের সহায়তায় পেলেন সংসার। বুধবার রাতে হোমেই বসেছিল বিবাহবাসর। বিয়ে বলে কথা। গোটা হোমটাই সাজানো হয়েছিল আলোকমালায়। অন্য আবাসিকেরাও সেজেছিলেন কনেবাড়ির লোকজনের মতো।

বধূবেশে প্রমীলা ও আরতী। —নিজস্ব চিত্র।

বধূবেশে প্রমীলা ও আরতী। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
পাঁচলা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

হোম থেকে সুখী গৃহকোণ।

পেশায় গাড়ির চালক সঞ্জয় ও সমীরের হাত ধরে নতুন জীবনে প্রবেশ করলেন আরতি ও প্রমীলা। হাওড়ার পাঁচলার জুজারসাহা মালিপুকুরে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি হোমে প্রায় টানা ছয় বছর ধরে আশ্রিত আরতী বর্মা এবং প্রমীলা কুমারী। অবশেষে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের সহায়তায় পেলেন সংসার। বুধবার রাতে হোমেই বসেছিল বিবাহবাসর। বিয়ে বলে কথা। গোটা হোমটাই সাজানো হয়েছিল আলোকমালায়। অন্য আবাসিকেরাও সেজেছিলেন কনেবাড়ির লোকজনের মতো। হাজির ছিলেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক দেবকুমার রায় এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অংশুমান অধিকারী। আর পাঁচটা দিনের থেকে একেবারেই অন্যরকম পরিবেশ। আর সেই পরিবেশেই আরতির সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল নবদ্বীপের বাসিন্দা সমীর দাসের। আরতিকে বধূ হিসাবে বরণ করে নলেন হাওড়ার বি গার্ডেনের বাসিন্দা সঞ্জয় মাঝি।

সঞ্জয় এবং সমীর দু’জনেই পেশায় হাওড়া জেলা হাসপাতালের গাড়িচালক। হোমের আবাসিক কিশোরেরা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রমীলা তাদের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ সঞ্জয়ের। এরই মধ্যে আবার সঞ্জয়ের মা শিবানিদেবী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। সেখানে তাঁর পরিচর্যা করেন প্রমীলা। ব্যস, মন জয় করে নেন শিবানীদেবীর। ছেলের সঙ্গে এই মেয়েরই বিয়ে দেওয়ার মনস্থ করেন তিনি। রাজি হয়ে যায় সঞ্জয়ও। তবে শুধু নিজেরই নয়, অভিন্নহৃদয় বন্ধু সমীরের জন্যও মাঠে নেমে পড়লেন। সঞ্জয়ের সঙ্গে প্রমীলার সম্পর্কের সূত্র ধরে সমীরের সঙ্গে আলাপ হল আরতির। শেষ পর্যন্ত তা গড়াল বিয়ের বাসরে।

তবে নিয়মের বেড়াজালে সবকিছু অবশ্য সহজে হয়নি। হোমের পক্ষ থেকে দুই পাত্রের বাড়িতে বিস্তর খোঁজ নেওয়া হয়। পাত্রের বাড়ির লোকজনও হোমে এসে দুই পাত্রীকে দেখে যান। তাঁদের সঙ্গে হোম কর্তৃপক্ষ কথাবার্তা বলার পরে বিয়ে চূড়ান্ত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জেলা সমাজকল্যাণ দফতরকে। তাদের অনুমতি মেলার পরেই দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘প্রমীলার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। আশা করি এই বিয়েতে সুখী হব।’’ আর সমীর? তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে মনে হল ওর মতো মানুষ হয় না। ঠিক করলাম ওর সঙ্গেই ঘর বাঁধব।’’

স্বামী, সংসার পেয়ে খুশি প্রমীলা, আরতীও। দু’জনেই বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে এতদিন বাদে আসল ঠিকানা পেলাম। তবে হোমে এত বছর যে ভাবে ছিলাম তা-ও ভুলব না।’’ বিয়েবাড়ির কত্রী হিসাবে দম ফেলার ফুরসত ছিল না হোমের কর্ণধার অপর্ণা চক্রবর্তীর। দৌড়াদৌড়ির ফাঁকে বললেন, ‘‘ওরা আমাদের এখানে অনেক বছর ছিল। ওদের বাপের বাড়ির ঠিকানা খোঁজার বহু চেষ্টা করেছি পাইনি। এখন ওদের শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা তো পেলাম। সেটাই বা কম কথা কী!’’

বিয়েবাড়িতে তখন চলছে বিরিয়ানির ভুরিভোজ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy