ফাইল চিত্র।
নিজের জেলায় কাজের অভাব বলে ওঁদের দাবি। অন্যদিকে, ভিন্ রাজ্যে কাজের হাতছানি। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়টিকে বেছে নিয়ে ফের পাড়ি দিচ্ছেন লকডাউনে ঘরে ফেরা হাওড়ার পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ।
প্রায় প্রতিদিন পাঁচলা, বাগনান, উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমিকেরা বেরিয়ে পড়ছেন। কেউ যাচ্ছেন মুম্বই, কেউ জয়পুর, কেউ চেন্নাই। পুরনো কর্মস্থলেই। কারও জরির কাজের ডাক এসেছে। কারও সোনার। ডেকরেটরের কাজ বা কাঠের কাজও রয়েছে।
পাঁচলার শেখ আসাদুল বা শেখ মাবুদের কথাই ধরা যাক। লকডাউনের মধ্যে দু’জনেই ফিরেছিলেন। দু’জনেই জরির কারিগর। আসাদুল কাজ করতেন মুম্বইয়ে। মাবুদ হায়দরাবাদে। আরও অনেকের মতো কয়েকদিন আগে দু’জনেই ফিরে গিয়েছেন তাঁদের পুরনো কাজের জায়গায়।
মুম্বই থেকে আসাদুল বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ নেই। মুম্বইয়ে যেখানে আমরা কাজ করি, সেখান থেকে মালিক ডাকলেন। কী আর করা যাবে! না হলে সংসার চলবে না। তাই চলে এসেছি।’’ একই বক্তব্য আরও অনেক ভিন্ রাজ্যে পাড়ি জমানো শ্রমিকদের। এমনকি, সংক্রমিত হওয়ার পরে সুস্থ হয়েছেন, এমন পরিযায়ী শ্রমিকও রয়েছেন সেই দলে।
লকডাউনের সময়ে দক্ষ-অদক্ষ মিলিয়ে এই জেলার প্রায় ২৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ নিজেদের পুরনো কাজের জায়গায় ইতিমধ্যেই ফিরে গিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। অথচ, ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য জেলা প্রশাসন নানা পরিকল্পনা করেছিল। তার মধ্যে প্রধান ছিল একশো দিনের কাজে তাঁদের যুক্ত করা। কিন্তু তাতে যে সবাইকে কাজ দেওয়া যায়নি, সে কথা জেলা প্রশাসন মানছে। প্রশাসন জানিয়েছে, মোট ৮০০০ পরিযায়ী শ্রমিককে ‘জব কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ওই প্রকল্পে কাজ করেছেন। কিন্তু এত কমসংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিককে ‘জব কার্ড’ দেওয়া হল কেন?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘নিয়ম হল, ‘জব কার্ড’-এর জন্য আবেদন করতে হয়। যত জন আবেদন করেছেন, তাঁদের সবাইকে ‘জব কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। বাকিরা আবেদন করেননি।’’ কিন্তু বিভিন্ন এলাকার বহু পরিযায়ী শ্রমিকের অভিযোগ, আবেদন করলেও পঞ্চায়েতগুলি ‘জব কার্ড’ দেয়নি। ফলে, তাঁরা কাজ পাননি। এ ছাড়াও, অন্য সমস্যাও সামনে এসেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ওই প্রকল্পে স্থায়ী কাজ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ব্লককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, ওই শ্রমিকেরা যাতে এখানেই থেকে যান। কিন্তু অধিকাংশ ব্লক তা করতে পারেনি বলে জেলা প্রশাসন মানছে। আমপানে যে বিপুল সংখ্যক গাছ পড়ে গিয়েছিল, সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার কাজে বহু পরিযায়ী শ্রমিককে ১০০ দিনের প্রকল্পে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু জুলাই মাসেই সেই কাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে, জুলাই মাস পর্যন্ত জেলায় ১০০ দিনের কাজে যে জোয়ার এসেছিল, পরে তা আর দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘গাছ সরানো এবং নিকাশি নালা সাফ করার কাজে ১০০ দিনের প্রকল্পে বহু পরিযায়ী শ্রমিককে কাজ দেওয়া গেলেও পরে তাতে ভাটা পড়ে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী কিছু পরিকল্পনা করার দরকার ছিল। তা আর করা যায়নি।’’
‘সেফ হোমে’ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য সুস্থ হয়ে ওঠা সংক্রমিত পরিযায়ী শ্রমিকদেরও নিয়োগ করতে বলেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তেমন সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন এক বিডিও। তাঁর কথায়, ‘‘অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই শ্রমিকদের নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল। দু’মাস কাজের জন্য মাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন নির্দিষ্ট হয়। কিন্তু আমরা যোগাযোগ করলে শ্রমিকদের অনেকেই জানান, ফের ভিন্ রাজ্যে কাজ নিয়ে তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy