Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
দাবি পূরণ হল না, ফের হাইকোর্টের দরজায় সনৎ

‘নির্মল’ গ্রামে শৌচাগার শুধু আশ্বাসই

‘টয়লেট, এক প্রেমকথা’ ছবির নায়ক অক্ষয় কুমার শৌচালয় তৈরিতে প্রশাসনের সাহায্য পেয়েছিলেন। কিন্তু খাতায়-কলমে ‘নির্মল’ জেলা হুগলির তারকেশ্বর ব্লকের সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের গৌরীবাটি গ্রামের বাসিন্দা সনৎ পেয়েছেন শুধুই প্রতিশ্রুতি। তাই বাড়িতে শৌচাগার তৈরির দাবিতে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

হতাশ সনৎবাবুর মা জয়ন্তীদেবী। ছবি: দীপঙ্কর দে

হতাশ সনৎবাবুর মা জয়ন্তীদেবী। ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

রুপোলি পর্দার সঙ্গে বাস্তবের যে ঘোরতর অমিল, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তারকেশ্বরের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সনৎকুমার রাউত!

‘টয়লেট, এক প্রেমকথা’ ছবির নায়ক অক্ষয় কুমার শৌচালয় তৈরিতে প্রশাসনের সাহায্য পেয়েছিলেন। কিন্তু খাতায়-কলমে ‘নির্মল’ জেলা হুগলির তারকেশ্বর ব্লকের সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের গৌরীবাটি গ্রামের বাসিন্দা সনৎ পেয়েছেন শুধুই প্রতিশ্রুতি। তাই বাড়িতে শৌচাগার তৈরির দাবিতে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

তাঁর খেদ, বাড়িতে শৌচাগার না থাকায় বৃদ্ধা মাকে মাঠে খোলা জায়গায় যেতে হয়। শৌচাগার নেই বলে এ যাবৎ বিয়ে করতে পারেননি ওই যুবক। সনতের ভাই সুরজিৎ দিল্লিতে থাকেন। তিনি বিয়ে করেছেন। তবে, স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে ফ্যাসাদে পড়েছেন তিনিও। সুরজিৎ বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে স্ত্রীকে এখানে এনেছি। শৌচাগার না থাকায় বিপদে পড়ে গিয়েছি।’’

সেই ২০১১ সাল থেকে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন সনৎ। হচ্ছে না কেন? রাউত পরিবারের অভিযোগ, সে বছর তারা শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা করলেও পঞ্চায়েত অনুমতি দেয়নি। তখন সনৎ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত অনুমতি দেয়। কিন্তু সেই মোতাবেক শৌচাগার নির্মাণ করতে গেলে আবারও পঞ্চায়েতের বাধার মুখে পড়তে হয়। এই টানাপোড়েনে দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। তাঁর মা জয়ন্তীদেবী বলেন, ‘‘আমার বয়স হয়েছে। মাঠে যেতে হয়। আমরা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু এখনকার দিনে বাড়িতে যদি শৌচাগার না থাকে, তাহলে ছেলের বিয়ে দেওয়া যায়? ছেলের বয়সও অনেক হয়ে গেল। শৌচালয় নেই বলে ছেলের বিয়ে দিতে পারছি না।’’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খবর

প্রশাসন ‘বিমুখ’ হলেও সনৎবাবু পাশে পেয়েছেন চন্দননগর আইন সহায়তা কেন্দ্রকে। তারা জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত, বিডিও-সহ জেলার পদস্থ কর্তাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছে সনৎবাবুর হয়ে। কাজের কাজ অবশ্য হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাপেক্ষে হুগলি এখন নির্মল জেলা। সেই মতো সরকারি পোস্টারও পড়েছে। অর্থাৎ সরকারি তথ্য বলছে, জেলার প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার আছে। কিন্তু সেই দাবির সঙ্গে সনৎবাবুর পরিস্থিতি একেবারেই মেলে না। সনৎ বলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে ফের হাইকোর্টে আবেদন করেছি।’’

কেন পঞ্চায়েতের সাড়া মিলছে না? সন্তোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান স্বরূপ ঘোষের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফে শৌচালয় নির্মাণের জন্য দু’বার বাড়িতে গিয়েও ওঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। গ্রামের লোককে বলে আসা হয়েছে উনি যেন পঞ্চায়েতে দেখা করেন। তাও করেননি।’’

সোমবার ওই পরিবারের লোকজনকে বাড়িতেই পাওয়া গেল। চন্দননগর আইন সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের বক্তব্য পরিষ্কার নয়। পঞ্চায়েতে আবেদন করে কাজ হলে কেউ কী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়? ওঁদের বাস্তব সমস্যা পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের বোঝা উচিত ছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitation Toilet Tarakeshwar Sanath Raut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE