বৈঠকের আগে মমতাকে প্রণাম লক্ষ্মীরতন শুক্লর। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মঙ্গলাহাটকে আরও সুন্দর করে সাজাতে হাওড়া পুরসভাকে নোডাল এজেন্সির দায়িত্ব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাওড়ার শরৎসদনে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি এ কথা জানিয়ে এলাকার উন্নয়নে এক ছাতার তলায় প্রতিটি দফতরকে এনে সমন্বয় তৈরির উপরে জোর দেন। তিনি বলেন, ‘‘এলাকা সাজাতে পুরসভার সঙ্গে কেএমডিএ, হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা(এইচআইটি) কিংবা অন্য কোনও সংস্থার সমন্বয়ের অভাব হলে চলবে না। কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কাজে দেরি করবেন না। সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’’
তাঁর নির্দেশ, ‘‘কলকাতা পুরসভার সঙ্গে রাজ্যের অন্য দফতরগুলিকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক করে এক ছাতার তলায় করে দিয়েছি। হাওড়াতেও তাই করতে হবে। আজকের বৈঠকের পর কেএমডিএ, পিডব্লিডি, এইচআইটি, আরবান ডেভেলপমেন্ট দফতর একসঙ্গে পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করবে। তার পরে যেন আর কোনও সমস্যা তৈরি না হয়।’’ ফরশোর রোড দিয়ে আসার সময় রাস্তার দু’ধারের সৌন্দর্যায়ন দেখে তিনি যে খুব খুশি তাও জানান মমতা। পরে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভা খুব ভাল কাজ করছে। তাই রথীনদের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে রাজ্যসভার সাংসদদের তহবিল থেকে ২কোটি টাকা হাওড়ার উন্নয়নে পুরস্কার হিসেবে দিচ্ছি। পাশাপাশি সাংসদদেরও বলেছি এলাকার সৌন্দার্য্যায়নের দিকে নজর দিতে।’’
তবে জেলায় রাস্তার কাজে পূর্ত দফতরের ভূমিকা নিয়ে তিনি যে খুশি নন, এ দিন তা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রোজগার যোজনায় যে রাস্তা রয়েছে, সেই কাজে পূর্ত দফতর পিছিয়ে। সেই কাজ তরান্বিত করতে হবে।’’ ১০০ দিনের কাজের প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত আর্থিক বছরে ১০০ দিনের কাজে ৪৪টি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। এ বার সংখ্যাটা আরও বাড়াতে হবে। আগের রেকর্ড ভাঙতে হবে।’’ পাশাপাশি খাদ্যসাথী প্রকল্পে হাওড়া জেলায় এখন পর্যন্ত ২০ লক্ষ ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি না হওয়ায় তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন, জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত কার্ড বিলির কাজ শেষ হয়ে যাবে।
রাজ্যে উন্নয়নে খরচের টাকা জোগাড় প্রসঙ্গে মমতা জানান, এ বছর ৪৭ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করতে হবে রাজ্যকে। পরের বছর সেটা ৬০ কোটি হবে। ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য সরকারের বছরের খরচ ১১ হাজার ১৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য চালাতে যা খরচ তার চেয়ে বেশি যদি ঋণ শোধ করতে হয় তা হলে কোথা থেকে কাজ হবে? প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘দেখবেন, সরকারের টাকা যাতে নষ্ট না হয়। সব যেন ঠিকমতো খরচ হয়। আর তাই খাদ্যসাথীপ্রকল্প তাড়াতাড়ি শেষ করতে বলছি।’’
বৈঠকের পরে উদয়নারায়ণপুর সহ বন্যাপ্রবণ এলাকায় সেচ দফতরের বাঁধ মেরামতি, খাল সংস্কার নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সেচের কাজ ভালই হচ্ছে। উদয়নারায়ণপুরে দামোদরের উপরে একটি সেতু তৈরি হচ্ছে। তবে তা শেষ হতে দেড় বছর লাগবে।’’
জেলায় পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ এবং পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈনের কাজের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা সবই জানতে হবে পুলিশকে। এলাকার ছোটখাটো বৃদ্ধাশ্রম, হোমগুলির পাশে থাকতে হবে। পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদের বসিয়ে রাখলে চলবে না বলেও রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কোন এলাকায় কারা ঘর ভাড়া নিচ্ছে, কোন জায়গা কারা এসে দখল করছে, সব বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও ব্যবহার করুন।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, হাওড়ায় যানবাহন, লোকজনের চাপ সবচেয়ে বেশি। তাই ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে রাজ্য সরকার সাধ্যমতো সহযোগিতা করবে। জেলায় গ্রামের প্রতিটি ঘরে এক-দেড় মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে বলেও এ দিন দাবি করেন তিনি।পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, হাওড়ায় ক্ষুদ্রশিল্পের হাব, বেলুড় শিল্পতীর্থ তৈরি করা হচ্ছে। এই কাজে জাপানের ইয়াকোহামা শহরের সাহায্যও মিলছে। কাজ হলে কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। এছাড়াও উলুবেড়িয়ায় মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন বৈঠকে জেলার মন্ত্রী, বিধায়ক ও প্রশাসনের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি শেষ পর্যন্ত যাননি। তবে বৈঠকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের কেন ডাকা হয়নি তা নিয়ে শুরুতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দিনে প্রশাসনিক বৈঠকে যাতে পুরসভার মেয়র পারিষদেরা ডাক পান সে জন্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন মেয়র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy