ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। পান্ডুয়া স্টেশনে ঢোকার রাস্তার অবস্থা এমনই। নিজস্ব চিত্র।
একে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার তাড়া, তার উপরে বারে মদ খাওয়ার খরচ। এই সব দোলাচলের মধ্যে নিত্যযাত্রীরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন শুধুই নেশার টানে।
মধ্যপন্থার মাধ্যম ট্রেন। এই চলমান সুরা পানের আসরের সুবিধাই অনেক— এমনটাই দাবি অন্তত রসিকদের। এই চলমান বারে রাতে বাড়ি ফেরারও সময়ের হেরফের হয় না। লোকজনের উদ্বেগ তাতে বাড়ে না। তার উপর পকেটের খরচও নামমাত্র। ন্যূনতম ব্যায়ে সকলে মিলে গল্প, আড্ডা আর তাসের মাঝেই সবকিছু মিটে যায়। ট্রেনে খাবারের বিশেষ ঝক্কি নেই। যোগানেরও কোনও সমস্যা নেই। বাদাম, ঝুরি ভাজা, মুগ ডাল ভাজা যোগানোর জন্য রয়েছে অজস্র হকারের হাঁকডাক। রয়েছে ঝাল মুড়িও। কী নেই ট্রেনে? একটা বোতলে সুরা মিশিয়ে নিয়েই বার চালু। সেই বোতলই রসিকদের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে চক্রাকারে। এক লিটার জলে একটা নিব-মোটামুটি এটাই মাপ বলছিলেন এক রসিকজন। তাঁদের দাবি, ট্রেনে সকলের মাঝে নেশা একেবারে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। যেহেতু ট্রেনে অন্য যাত্রীরা থাকেন, তাই নেশাতুরদের সচেতন থাকতে হয়। বেসামাল যেন কিছু না হয়। ট্রেনে নিয়মিত মদ্যপানে অভ্যস্ত এক তরুণ বলেন, ‘‘এটা যেন ছোটবেলায় সরস্বতী পুজোর মণ্ডপের পিছনে লুকিয়ে বিড়ি খাওয়ার আমেজ। অন্য এক মজা। সকলের মাঝে কিন্তু কোথাও যেন একটা আড়াল করার চেষ্টা।’’ তবে মাঝে মাঝে নেশা মাত্রা ছাড়ায় বলে অভিযোগ ওঠে।
লুকিয়ে চুরিয়ে মদ্যপান ট্রেনে ছিলই বরাবর। এমনকী দূরপাল্লার ট্রেনেও এই রেওয়াজ বহুদিনের। কিন্তু ইদানিং লোকাল ট্রেনে এটি বেশিমাত্রায় চালু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বস্তুত নিয়ম অনুয়ায়ী ট্রেনে সিগারেট খাওয়াও দীর্ঘদিন ধরেই আইন মাফিক নিষেধ। সিগারেট খাওয়া মোটামুটি বন্ধই আছে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনে। তবে চালু হয়ে গিয়েছে মদ্যপান।
এই মদ্যপান মাত্রা ছাড়ায় শ্রাবণ মাসে এবং যে সব বাংলা মাসে তারকেশ্বরে জল ঢালার তিথি থাকে। সেই সব মাসে ট্রেনের ভিতরে মদ্যপান মাত্রা ছাড়ায়। শুধু মদ নয়, দেদার চলে গাঁজায় টান। কখনও তা সিগারেটের মধ্যে পুরে। আবার কখনও বা একেবারে খোলাখুলি গাঁজা কলকের ভিতর ভরে নিয়ে। গাঁজার গন্ধে ম-ম করতে থাকে গোটা ট্রেন। বিশেষত তরুণদের ভিতর নেশার প্রবণতা বেশি। তারকেশ্বর যাত্রীদের আবার সাত খুন মাপ। তাঁদের রেল পুলিশ বা সাধারণ যাত্রীরা বিশেষ ঘাঁটাতে চান না কেউই। প্রতিদিন ট্রেনের কামরায় নেশার আয়োজন থাকলেও তা কিন্তু মাত্রা ছাড়ায় ভেন্ডারে। সেখানে মদের পাশাপাশি চলে গাঁজা। একেবারে খোলাখুলি। কখনও তা তাস পাটির মধ্যে আবার কখন সাধারণ যাত্রীদের। তিন থেকে চারজনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গিয়ে চলে নেশার মৌতাত। তবে রাত যত বাড়তে থাকে ট্রেনে নেশার মাত্রাও বাড়ে। সন্ধ্যায় ট্রেনগুলোতে কিন্তু নেশার উপদ্রব সেইভাবে থাকে না। রাতে নেশা বাড়ে। সাধারণ মধ্যবিত্ত যুবক থেকে খেটে খাওয়া সব বয়সের মানুষ বাড়ি ফেরার পথে দিনের ক্লান্তির পর এই নেশার মধ্যেই খুঁজে নেয় সাময়িক আনন্দ।
এই আনন্দের টানে কোনও বয়সের ভেদাভেদ নেই। রসিক মন মিললেই চলে সুরাপান। সঙ্গে সামান্য টাকার জোগান। ট্রেন থামলে তার পর যে যার স্টেশন আসতেই গন্তব্যে মিলিয়ে যান নিজের নিজের ঠিকানায়।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy