Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rain

পরিকল্পনায় গলদের কারণেই খানাকুল জলবন্দি, অভিযোগ

সোমবার দুপুর থেকেই ডুবে রয়েছে জগদীশতলা। বাস চলাচল বন্ধ।

খানাকুলের পোল অঞ্চলে জল ছুঁইছুই সাঁকো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

খানাকুলের পোল অঞ্চলে জল ছুঁইছুই সাঁকো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৪:৫৫
Share: Save:

বাঁধ কোথাও ভাঙেনি। রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরীর জলস্তরও খানিকটা কমেছে। তবু আরামবাগ মহকুমার খানাকুল-২ ব্লকের বহু এলাকা থেকে সরেনি জল। তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। প্রশ্ন উঠেছে, বৃষ্টির জমা জলেই যদি এই অবস্থা হয়, তবে নদীর বাঁধ ভাঙলে বা নদীর জল ঢুকলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে।

সোমবার দুপুর থেকেই ডুবে রয়েছে জগদীশতলা। বাস চলাচল বন্ধ। মঙ্গলবার রাস্তায় জলের উচ্চতা আরও প্রায় এক ফুট বেড়েছে। কেন এই পরিস্থিস্তি? এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের আওতায় আনা হয়নি অরোরা খালের ১২ কিলোমিটার অংশ। ফলে রূপনারায়ণে পড়ছে না জমা জল। সেই জলেই প্লাবিত হচ্ছে ব্লকের বহু এলাকা। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাঁদের। জেলা সেচ দফতর জানিয়েছে, অরোরা খালের ওই ১২ কিলোমিটার আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অরোরা খালের মধ্যে আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল মাত্র ৪ কিলোমিটার। ওই অংশের সংস্কারও হয়ে গিয়েছে। বাকি ১২ কিমি কোথাও মজে গিয়ে সরু হয়ে গিয়েছে, কোথাও আবার সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গিয়েছে। মহকুমার সমস্ত জমা জল বিভিন্ন খাল বেয়ে খানাকুল-২ নম্বর ব্লকের দক্ষিণে রূপনারায়ণ নদে পড়ে। জেলার এবং মহকুমারও শেষ প্রান্ত ওই ব্লক। বন্যা মোকাবিলায় সেই সব মজা খালগুলির সংস্কারের ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করে রাজ্য সরকার। প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ শেষ হয়েছে।

তৃণমূল পরিচালিত ধান্যগোড়ী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ সানকির অভিযোগ, “স্রেফ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রাজ্য সরকারের ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। এতে বিপদ বেড়েছে। উপরের সমস্ত জমা জল যে অরোরা খাল হয়ে রূপনারায়ণ নদে পড়ে, সেই খালের উপরের চার কিমি অংশকে প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই অংশের কাজ করে ফেলেছে সেচ দফতর। কিন্তু নদীতে মেশার মুখে খালের ১২ কিমি অংশ প্রকল্পের মধ্যেই ধরা নেই। ফলে উপর থেকে সমস্ত জল রূপনারায়ণে নামতে না-পেরে ব্লকের ১১টা পঞ্চায়েত এলাকা ভাসিয়ে দিচ্ছে।”একই অভিযোগ জগৎপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাস সাউ, রাজহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান আকতারা বেগম, মাড়োখানা পঞ্চায়েতের প্রধান হাবল মণ্ডলের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অরোরা খালের ওই ১২ কিমি অংশকে অবিলম্বে আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন তাঁরা।

গত মার্চ মাস ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চলাকালীন আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের ত্রুটির বিযয়টি প্রশাসনের নজরে এনেছিলেন ঘোড়াদহ গ্রামের চিত্তরঞ্জন বেরা। তাঁর অভিযোগ “জল রূপনারায়ণে না-পড়লে শুধু খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতই ডুববে না, খানাকুল-১ ব্লকেরও ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকাও বিপর্যস্ত হবে।” রূপনারায়ণের মুখে অরোরা খালের প্রায় ১২ কিমি অংশ যে আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের মধ্যে ধরা ছিল না, তা স্বীকার করেছে সেচ দফতর। এই ‘ত্রুটি’ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর) এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল। তিনি বলেন, “আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ওই খালের বাকি ১২ কিমি অংশকে আনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে ওই অংশের সংস্কার হবে। জরিপের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রকল্প রচনা চলছে।”

বন্যা মোকাবিলায় ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে গত ২০ নভেম্বর। ৩৯ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের অধীনে থাকা আরামবাগের কানা দ্বারকেশ্বর থেকে শুরু করে কাটা খাল, কানা মুণ্ডেশ্বরী, মলয়পুর খাল, ভোমরা খাল, অরোরা খাল সংস্কার হয়ে গিয়েছে। এ দিন দুপুরে মহকুমাশাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহ খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ী, মাড়োখানা, জগৎপুর, রাজহাটির মতো বেশ কয়েকটি জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। ছিলেন বিডিও (খানাকুল-২) দেবল উপাধ্যায়ও।

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Khanakul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy