প্রতীকী ছবি।
টাকা নিয়ে বসে আছে প্রশাসন। নেওয়ার লোক নেই!
করোনা বিপর্যয়ে খারাপ অবস্থায় দিন কাটছে প্রান্তিক এবং বয়স্ক মানুষদের। উপার্জনের রাস্তা কার্যত বন্ধ। হাতে টাকা নেই। রয়েছে অসুখ-বিসুখ, সংসার খরচ। অথচ, হাওড়া জেলায় ‘জয় বাংলা’ প্রকল্পের ১০০০ টাকা করে মাসিক পেনশন নেওয়ার জন্য তফসিলি জাতিভুক্ত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি নাগরিকদের যেন তেমন গরজ নেই! কা্রণ, প্রশাসনের ঘরে আবেদন জমা পড়েছে নামমাত্র।
অথচ, সদ্য শেষ হওয়া ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্পে উল্টো ছবিই দেখা গিয়েছে। কাজ হারানো শ্রমিকেরা এই প্রকল্পে এককালীন এক হাজার টাকা করে পাবেন। প্রথমে হাতে লেখা আবেদনপত্র জমা নেওয়ার কথা বলা হলেও ভিড়ের চোটে গোটা প্রক্রিয়াই অনলাইনে হয়। তাতেও এত আবেদন আসতে থাকে যে চাপের মুখে ‘সার্ভার’ বসে যায়। ফলে, এই জেলায় অনেকে শেষ পর্যন্ত আবেদনই করতে পারেননি।
‘জয় বাংলা’য় সাড়া নেই কেন?
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক প্রচার এবং তৎপরতার অভাব রয়েছে। ৩১ মে পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষকে এই পেনশন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। অথচ, ১৫ মে পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ১০ হাজার ৮৪৭টি। এই হারে চলতে থাকলে যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না, তা মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।
একনজরে প্রকল্প
• নাম: জয় বাংলা
• বিষয়: ৬০ বছর এবং তার বেশি বয়সি তফসিলি জাতিভুক্তদের মাসিক ১০০০ টাকা পেনশন।
• ঘোষণা: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে।
• হাওড়ায় মে পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা: ৭০ হাজার।
• আবেদনপত্র জমা
(১৫ মে পর্যন্ত): ১০ হাজার ৮৪৭।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যবস্থা হচ্ছে। বিডিওদের আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকেও প্রচার করতে বলা হচ্ছে।’’ কিন্তু মাসের প্রায় অর্ধেক হয়ে গেলেও ব্লক অফিসগুলিতে আবেদন করতে কেউই প্রায় আসছেন না।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে। আবেদন করতে হবে ব্লক প্রশাসনের কাছে। আবেদনের প্রক্রিয়াও সহজ। নির্দিষ্ট বয়সিরা আবেদন করতে পারবেন। তার মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও থাকতে পারেন। আবেদনকারীর শংসাপত্র না থাকলে পরিবারের যে কোনও একজনের শংসাপত্র থাকলেও তিনি বিবেচিত হবেন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আবেদনপত্র জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি খতিয়ে দেখে বেশির ভাগই অনুমোদন করা হয়েছে। লকডাউন পর্বে একসঙ্গে দু’মাসের পেনশনও দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তবু সাড়া নেই।
বিরোধীদের দাবি, ‘প্রচেষ্টা’-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা হওয়ামাত্র শাসকদলকে যে ভাবে তৎপর হতে দেখা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। কারণ, গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, তফসিলি জাতির ভোটের একটা বড় অংশ শাসকদলের অনুকূলে আসেনি। ফলে, প্রকল্প নিয়ে শাসকদলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। তাঁদের তরফে জোরদার প্রচারও নেই।
বিজেপির হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি শিবশঙ্কর বেজ বলেন, ‘‘এখানে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ওই প্রকল্পে তফসিলিদের সুবিধা পাইয়ে দিতে সহায়তা তো করেনইনি, উল্টে ফর্ম তুলতেও বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের মনে হয়েছে, তফসিলিদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে।’’ কংগ্রেস এবং সিপিএমের পক্ষ থেকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তফসিলিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগ মানেননি জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায়। তাঁর দাবি, ‘‘বিরোধীরা সবেতেই রাজনীতি খোঁজেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই প্রকল্প। এতে আমরা বাধা দেব কেন?’’ একই সঙ্গে বিধায়কের সংযোজন, ‘‘লকডাউনের জন্য অনেকে ব্লক অফিসে আসতে পারছেন না। তা ছাড়া, এর আগে সমাজকল্যাণ দফতর যে মাসিক ভাতা দিয়েছে তাতে বহু তফসিলি জাতির মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাই আবেদনকারীর সংখ্যা কম। আমরা পঞ্চায়েত স্তরে লক্ষ্য রাখছি। যাতে যাঁরা যোগ্য, তাঁরা সবাই পেনশন পান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy