জয়শ্রী টেক্সটাইলের কারখানা। নিজস্ব চিত্র
মালিকপক্ষ কার্যত ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন। কিন্তু সেই ‘চাপ’ মানতে নারাজ শ্রমিক সংগঠন। ফলে, রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলস-এর পরিস্থিতি আরও জটিল হল। দু’পক্ষের বিরোধ এখনই মেটার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ওই কারখানায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সেখানে অশান্তির অভিযোগে বেশ কয়েক জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সবাইকে কাজে ফেরানোর দাবিতে গত ৪ জুন থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন শ্রমিকেরা। ফলে, কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকেও সমস্যা মেটেনি। বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শ্রমিকদের জানানো হয় আজ, শনিবারের মধ্যে কাজে যোগ না-দিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ বা ‘লক আউট’ ঘোষণা করা হবে। কারখানার আটটি শ্রমিক সংগঠনকেও চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষের এই অবস্থানের প্রেক্ষিতেই শুক্রবার সব শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব বৈঠকে বসেন। সিদ্ধান্ত হয়, কর্তৃপক্ষের শর্ত শ্রমিকদের উপরে চাপানোর চেষ্টা করা হবে না। লিফলেট বিলি করে পরিস্থিতি সম্পর্কে শ্রমিকদের অবহিত করা হবে। কর্তৃপক্ষের কাছেও সেই বক্তব্য পৌঁছে দেওয়া হবে। শ্রমিকদের দাবিসনদের বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানানো হবে। আগামী সোমবার শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে কারখানা চত্বরে মিছিল করবে বলেও আলোচনায় স্থির হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী জানান, গোটা বিষয়টিতে নজর রাখা হচ্ছে। সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।
এ দিনের বৈঠক শেষে আইএনটিটিইউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক বছর আগে থেকে এ পর্যন্ত যে ২৩ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হোক।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘বিভাগীয় তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে বিচার যেন প্রহসন না হয়।’’ এআইটিইউসি নেতা দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরানো মালিকপক্ষের হাতে। শ্রমিকদের উপর মালিকপক্ষের অত্যাচারের ফলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ আইএনটিইউসি নেতা অজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। হুমকির নোটিস থেকে মালিকপক্ষের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পাচ্ছে।’’
গত ৩১ মে শ্রমিকদের সঙ্গে এক সুপারভাইজারের গোলমালকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। মারধরের অভিযোগে এক শ্রমিক গ্রেফতার হন। পাঁচ শ্রমিককে সাময়িক বহিষ্কার করে তদন্ত শুরু করেন কর্তৃপক্ষ। ৪ এপ্রিল থেকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। ওই দিন আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শ্রমিকদের দাবি, ওই সব শ্রমিক তো বটেই, গত বছর বহিষ্কার করা ন’জন শ্রমিককেও ফিরিয়ে নিতে হবে।
কারখানার এক কর্তা জানান, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। গত বছরের বহিষ্কৃত ন’জন এবং ৩১ মে’র ঘটনায় মারধরে জড়িত দুই শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তদন্ত চলবে। তবে ৩১ তারিখের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া বাকি তিন শ্রমিককে চার দিন সাময়িক বহিষ্কারের শাস্তি দিয়ে তাঁরা কাজে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। গত ৪ জুন সহকর্মীদের কাজ না-করায় উস্কানি দেওয়ায় যে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সতর্ক করে এবং এমন কাজ তাঁরা আর করবেন না, সে ব্যাপারে আশ্বাস দিলে তাঁদেরও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। শ্রমিকরা অবশ্য সেই শর্ত মানতে রাজি নন।কোন পথে জট খোলে এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy