রাজপথে যেখানে খুশি গাড়ি রেখে দেওয়াই ছিল গোটা শহরের দস্তুর। অবশেষে সেই অবস্থার পরিবর্তন করতে উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া পুরসভা। কিন্তু শুধু যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করে শহরকে গতিশীল করাটাই একমাত্র লক্ষ্য নয় পুরকর্তাদের। বরং শহরের রাস্তায় নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের জায়গা করে সেখান থেকে ফি আদায় করে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছেন তাঁরা।
এক পুরকর্তার দাবি, বাম পরিচালিত হাওড়া পুরসভায় ট্যান্ডেল বাগান এলাকা থেকে তিন বছরে মাত্র ৮ লক্ষ টাকা পার্কিং ফি আদায় হত। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে হাওড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ওই জায়গা থেকে এক বছরেই পার্কিং ফি বাবদ রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা।
হাওড়া পুরসভার পার্কিং বিভাগের মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্রের দাবি, ‘‘শুধু ট্যান্ডেল বাগান নয়, সারা শহরেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পার্কিং ফি থেকে বছরে ১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা।’’ অন্যান্য সব জায়গা মিলিয়ে ২০১৫-২০১৬ আর্থিক বছরে হাওড়া শহরের পার্কিং থেকে শুধু আয় হয়েছে ৫৬ লক্ষ টাকা।
পুরসভা সূত্রের খবর, হাওড়ার জিটি রোড, শিবপুর মন্দিরতলা, হাওড়া ময়দান, কোর্ট চত্বর, সালকিয়া, পিলখানা, হাওড়া স্টেশন চত্বর, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড-সহ শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তের যে কোনও জায়গাতেই রাস্তার উপরে দু’চাকা থেকে চার চাকার গাড়ি রেখে যে যার কাজে চলে যেতেন। তবে এ বিষয়ে শুধু গাড়ির চালক কিংবা মালিকদেরই দোষ দেওয়া যায় না বলেই মনে করেন পুরকর্তাদের একাংশ। কেন না, গোটা শহরের কোথায় কখনও নির্দিষ্ট কোনও পার্কিংয়ের জায়গাই ছিল না। ফলে সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আর রাস্তার উপরে এই লাগামছাড়া পার্কিংয়ের জন্য ভোগান্তি হত সাধারণ মানুষের। যেখানে সেখানে গাড়ি রাখার ফলে যানজট হয়ে যেত।
পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরেই রাজস্ব বৃদ্ধির দিকে নজর দেন পুরকর্তারা। তখন সিদ্ধান্ত মতো কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি কর বৃদ্ধি, বকেয়া কর আদায়ে জোর দিয়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রদান করে রাজস্ব বাড়ানোর কাজ শুরু করে পুরসভা। এর পরেই শহর জুড়ে যত্রতত্র পার্কিং নিয়ে সমস্যার সমাধানে পরিকল্পনা নেয় হাওড়া পুরসভা। এই সমস্যা নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফেও আবেদন জানানো হয় পুরসভাকে। সেই মতো শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, মোট ২৪টি জায়গা আপাতত চিহ্নিত করে সেখানে পুরসভার পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি পুলিশের থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিয়েই বঙ্কিম সেতু, নবান্ন জোন, ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেন, হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন হোটেল চত্বর, ডবসন রোড, ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, হাওড়া প্রশাসনিক চত্বর, সালকিয়া কালী মজুমদার লেন, অরবিন্দ রোড, লিলুয়া ঝিল রোড-সহ ২৪টি জায়গায় এই পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য পুলিশের খুবই সমস্যা হত। সেই জন্য আমরা যেখানেই পার্কিং ব্যবস্থা চালু করেছি, সেটা পুলিশকে জানিয়েই করেছি।’’
তবে সম্প্রতি বেলুড় বজরংবলী এলাকায় পার্কিং চালু করেছিল হাওড়া পুরসভা। কিন্তু ওই রাস্তাটিতে পার্কিং হলে ভারী লরি ঢোকা-বেরোনোর সমস্যা দেখা দেবে বলে তাতে আপত্তি জানায় সিটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর তা নিয়েই পুরসভার সঙ্গে দ্বিমত তৈরি হয় পুলিশের। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের কথা মেনে সেখান থেকে পার্কিং সরিয়ে নিয়েছে পুরসভা। ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘পার্কিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য পুরসভার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুমতি নেওয়ার কথা। কিন্তু কয়েকটি জায়গায় ওঁরা তা না করেই পার্কিং চালু করেছিল। তবে পরে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, সমস্ত জায়গাতেই এক ঘণ্টার জন্য দু’চাকার গাড়ি বাবদ ৫ টাকা ও চার চাকার ছোট গাড়ি বাবদ ১০ টাকা ফি নেওয়া হয়। তবে বঙ্কিম সেতুর উপরে রাতে পার্কিং করার জন্য মাসে বাস প্রতি ৩০০ টাকা এবং লিলুয়া ঝিল রোডে লরি পার্কিং করলে ৫০ টাকা ফি নেওয়া হয়। হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়াকে গতিশীল করতেই পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি, তা থেকে নিয়ম মেনে পুরসভার রাজস্বও বাড়ানোর একটা পথ খুলেছে। আগামী দিনে আরও পার্কিংয়ের জায়গা তৈরি হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy