—প্রতীকী ছবি
দীপাবলিতে বাজির দূষণে হুগলি জেলার মানুষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা মাপার কার্যত সার্বিক কোনও ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠল না।
দূষণ রোধে বাজি পোড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার পরেও এই উৎসবের মরসুমে হুগলিতে বাজির দূষণ নিয়ে চিন্তিত পরিবেশপ্রেমীরা। জেলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অফিস থাকলেও এতদিনে মাত্র দু’টি পুর এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে দূষণ মাপার যন্ত্র বসেছে। কিন্তু সেই যন্ত্র ব্যবহারের যথাযথ পরিকাঠামো এখনও হয়নি বলে পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগর, চুঁচুড়ার মতো শহরগুলি ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গাতেই কল-কারখানা আছে। এই সব জায়গায় বায়ু-দূষণের মাত্রা অবশ্যই মাপা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পরিবেশবিদ তথা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলে এবং যে সব জায়গায় জনসংখ্যা বেড়েছে, সেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা মেপে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। এই উৎসবের মরসুমে বাজির কারণে এবং ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার জন্য দূষণের মাত্রা অনেক বাড়ে। গাড়ির ধোঁয়া তো আছেই। অনেক শহরকে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। সমস্যা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে তবেই এর সঠিক মূল্যায়ন হবে।’’
কালীপুজো-দীপাবলিতে বাজি পোড়ে সর্বত্র। রয়েছে শব্দবাজির উপদ্রবও। পুলিশ প্রশাসন প্রতিবারই নজরদারির আশ্বাস দেয়। কিন্তু কালীপুজোর রাতে সেই নজরদারির ফাঁক গলেই শব্দবাজির কানফাটানো আওয়াজ শোনা যায়। আর আতসবাজিতেও প্রচুর দূষণ হয় বলে পরিবেশবিদদের দাবি। হুগলির মফস্সল শহরগুলিতে বায়ু দূষণের হাল কী, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, পুরসভাগুলিরও সম্যক ধ্যানধারণা নেই বললেই চলে। একমাত্র ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে দূষণমাত্রা মাপা হয় বলে সরকারি সূত্রের খবর। সম্প্রতি উত্তরপাড়া পুরসভাতেও এমন যন্ত্র বসানো হয়েছে। জেলা সদর চুঁচুড়াতেও দূষণ মাপার যন্ত্র বসতে চলেছে।
হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, পর্ষদের তরফে মাসতিনেক আগে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। পুরভবন লাগোয়া জমিতে যন্ত্র বসবে। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘মাসদেড়েক আগে আমাদের এখানে দূষণ মাপার যন্ত্র বসিয়েছে পর্ষদ। ওরাই দেখভাল করছে। আমাদের কোনও নির্দেশ দেওয়া হলে, নিশ্চয়ই করব।’’ কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা যন্ত্র বসাতে তৈরি। জমিও রয়েছে। পর্ষদকে চিঠি লিখেছি।’’ বেশ কয়েকটি পুরসভায় কথা বলে অবশ্য পরিষ্কার, তাদের পরিকাঠামো যেমন নেই, ভাবনাও নেই।
পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ জানান, দেড় দশক আগে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় পর্ষদের তরফে বায়ু দূষণ মাপা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, অন্য সময়ের তুলনায় দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেশি। পরে কল-কারখানা রয়েছে, এমন কয়েকটি শহরেও নিয়মিত বায়ু দূষণ মাপার চিন্তাভাবনা হয়েছিল। যদিও তা কার্যকর হয়নি। বছরখানেক আগে বিষয়টি ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পর্ষদের তরফে ঠিক হয়, বিভিন্ন জেলায় যন্ত্র বসানো হবে। কিন্তু হুগলিতে এখনও সেই পরিকল্পনা পুরো কার্যকর হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে ফোন করা হলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
দূষণের কারণে অসুখ-বিসুখ যে বাড়ছে, তা মানছেন চিকিৎসকেরা। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক কুণাল দত্ত বলেন, ‘‘বর্তমানে শিশুদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের অসুখ বেড়েছে। কাশি হচ্ছে। এই সমস্যা যে দিন দিন বাড়ছে, তার জন্য দূষণকেই দায়ী করা যায়। ইউনিসেফও মনে করে দ্রুত নগরায়ণের সঙ্গে ছোটদের এই সব অসুখের যোগ রয়েছে।’’ চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘বায়ু-দূষণের ফলে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসে নানা সংক্রমণ হতে পারে। যক্ষ্মার জীবাণু সক্রিয় হতে পারে। ক্যান্সারও হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy