Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
গ্রেফতার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি

বধূকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ আমতায়

বিয়ের একমাসও পেরোয়নি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক বধূর মৃত্যুতে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন বাপের বাড়ির লোকজন। মঙ্গলবার সকালে হাওড়ায় আমতার বসন্তপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পিঙ্কি হাজরাকে (২২)।

শোক: পিঙ্কির মা ।

শোক: পিঙ্কির মা ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আমতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

বিয়ের একমাসও পেরোয়নি। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক বধূর মৃত্যুতে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন বাপের বাড়ির লোকজন।

মঙ্গলবার সকালে হাওড়ায় আমতার বসন্তপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পিঙ্কি হাজরাকে (২২)। আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বাপের বাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বধূর স্বামী মন্টু হাজরা, শাশুড়ি শিখা হাজরা এবং শ্বশুর আনন্দ হাজরাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পিঙ্কির বাপের বাড়ি আমতারই পানপুর গ্রামে। গত ১১ মার্চ তাঁর বিয়ে হয়। হাওড়ার শিবপুরে একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন স্বামী মণ্টু। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ শাশুড়ি শিখাদেবী প্রতিবেশীদের ডেকে জানান, ঘরে খিল দিয়ে তাঁর পুত্রবধূ গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা দরজা ভেঙে বধূর দেহ উদ্ধার করে। পুলিশকে শিখাদেবী জানান, ছেলে শিবপুরে থাকেন বলে তিনি একই ঘরে পুত্রবধূকে নিয়ে ঘুমোতেন। সোমবার রাতেও পুত্রবধূকে নিয়ে খাটে ঘুমোচ্ছিলেন। মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়েছিলেন শ্বশুর।

মঙ্গলবার খুব ভোরে উঠে আনন্দবাবু পেঁড়োয় চলে যান। সেখানে তিনি মুদির দোকানে কাজ করেন। শিখাদেবীর দাবি, ‘‘স্বামী বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে উঠে শৌচকর্ম করতে যাই। ফিরে এসে দেখি ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকি।’’লোকমুখে খবর পেয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে হাজির পিঙ্কির বাবা-মা। তাঁদের অভিযোগ, পণের জন্যই মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মা সুষমা রায় বলেন, ‘‘বিয়ের সময় জামাইকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তারপরেও মিষ্টির দোকান করার জন্য এক লক্ষ টাকা চেয়েছিল সে। আমরা তা দিতে না পারায় মেয়ের উপরে রোজ অত্যাচার করত ওরা।’’ এদিনই আমতা থানায় মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।

পিঙ্কি। ছবি: সুব্রত জানা

প্রসঙ্গত, মন্টুর এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রী বিয়ের পরেই পালিয়ে যান। শিখাদেবীও আনন্দবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়ে মারা যান। তিন বছর আগে শিখাদেবীকে বিয়ে করেন তিনি।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের বক্তব্য, খুনের অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। কারণ, ঘরের দরজা ভেঙে অগ্নিদগ্ধ পিঙ্কিদেবীকে উদ্ধার করা হলেও পাশের ঘর থেকে ওই ঘরে আসার আরও একটি গোপন দরজার খোঁজ মিলেছে। ফলে তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে ভিতর থেকে দরজায় খিল দিয়ে ওই গোপন দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসা অসম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, তাঁরা তিনজনে ওই রাতে একই ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন বলে যে দাবি শিখাদেবী করেছেন তার সত্যতাও নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে স্বামী মন্টু ওই রাতে শিবপুরে ছিলেন কি না তাও।

গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা খবর পেয়ে আসার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পুলিশের প্রশ্ন, এত পরে ওই বধূর শাশুড়ি প্রতিবেশীদের খবর দিলেন কেন? গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই সব পরিষ্কার হবে। আমতা-১ এর বিডিও দেহের সুরতহাল করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Housewife murder Husband Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE