বিপজ্জনক: এ ভাবেই রয়েছে কাঁটাবনির সামন্ত পাড়ার বাড়িগুলো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কোথাও বাড়ির একাংশ ঝুলছে। কোথাও হেলে গিয়েছে কিংবা ফাটল ধরেছে। আরামবাগ মহকুমায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’ প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে ‘হিতে-বিপরীত’ হয়েছে বলে অভিযোগ।আরামবাগের কাঁটাবনি গ্রাম সংলগ্ন কানা দ্বারকেশ্বর সংস্কারের পরেই নদের পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। যার জেরে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছেন পাড় সংলগ্ন ওই গ্রামের সামন্তপাড়ার বাসিন্দারা। বিপন্ন গ্রামবাসী সাহায্যের আর্জি জানিয়ে মহকুমাশাসক (আরামবাগ)-এর দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সেচ দফতরের বিশেষজ্ঞদের তদারকি ছাড়া নদের সংস্কার হওয়ায় বিপর্যয় তাঁদের দুয়ারে হাজির হয়েছে। আরও অভিযোগ, গত দু’মাস ধরে ব্লক প্রশাসন এবং সেচ দফতরে এ নিয়ে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন সামন্তপাড়ার বাসিন্দারা। জনা ৩০ বাসিন্দার সই করা সেই অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের’ আওতায় নদটি ‘ঝাড়াইয়ের’ (সংস্কার) মাস খানেক পরেই জলের স্রোতে পাড় ধসে যায়। অধিকাংশ বাড়ি এখন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি হেলে পড়েছে। কিছু বাড়ি আবার ঝুলছে। যে কোনও সময় বড় বিপদ বা জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। জীবন এবং সম্পত্তি বাঁচাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সেচ দফতরকে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
হরিণখোলা ২ পঞ্চায়েত এলাকার কাঁটাবনি গ্রাম সংলগ্ন কানা দ্বারকেশ্বর নদের সংস্কার কাজ হয় জুন মাসের গোড়ার দিকে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি বৃষ্টিতে জলের স্রোতে পাড় ভাঙতে শুরু করে। ২৪ জুলাই এলাকাবাসী আরামবাগ ব্লক প্রশাসন এবং মহকুমা সেচ দফতরে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান। কিন্তু তাদের থেকে ইতিবাচক কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। অরূপকুমার সামন্ত নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, “এখানে আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের কাজ হয়েছে (সেচ) দফতরের আধিকারিকদের তদারকি ছাড়াই। নিজেদের ইচ্ছামতো মাটি কেটেছে যন্ত্রের চালকেরা। এই কারণেই গোটা পাড়া আজ বিপন্ন।’’ অরূপ বলেন, ‘‘এমনিতেই জায়গাটা ধসপ্রবণ। ২০১৭ সালে সেচ দফতর থেকে শালবল্লা দিয়ে পাড় বাঁধা হয়। কিন্তু মাস্টার প্ল্যানের কাজে সেই শালবল্লার খুঁটির গোড়া থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এতেই পাড়ে ধস নেমে বাড়িঘর ঝুলছে।”
একই অভিযোগ কমল সামন্ত, লক্ষ্মণ সামন্ত, সোমা সামন্তের মতো ওই এলাকার অনেক বাসিন্দার। কমল বলেন, “গোটা পাড়ায় সুরক্ষা প্রাচীর তৈরির দাবি করেছি আমরা।” নদ-সংস্কারের পরে কাঁটাবনি সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপরে একটি সেতুও কিছুটা বসে গেছে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবি, সেতুটি মজবুত করার কাজ শুরু হয়েও পরে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়েও এলাকায়
ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, বিষয়টি সেচ দফতরের। তারাই দেখছে। এ দিকে, সেচ দফতরের মহকুমা বাস্তুকার শ্রীকান্ত পাল বলেন, “পাড় ধসে যাবে, এমন ভাবে কোথাও মাটি কাটা হয়নি। শালবল্লা থেকে অন্তত ১ মিটার দূরে মাটি কাটা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলার জন্য খাল সংস্কার হয়েছিল। পরে সমস্ত জমা জল দ্রুত গতিতে নেমে যাচ্ছে। তাতেই বালিমাটি ধুয়ে গিয়ে ধস নামতে পারে।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘পাড়-সংলগ্ন বাড়িগুলির সমস্ত জল নদে ফেলা হচ্ছে। তাতেও পাড়ের মাটি ক্ষয়ে যাচ্ছে। পুরো বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুর্বল জায়গাগুলিতে সুরক্ষা প্রাচীরের ব্যবস্থা করা হবে।’’
রাস্তার উপরে সেতু বসে গিয়েছে বলে যে দাবি গ্রামবাসী করেছেন, সে প্রসঙ্গে শ্রীকান্তবাবুর প্রতিক্রিয়া, “সেতুর দেওয়াল দুর্বল ছিল। কিছুটা বসে গিয়েছে। আমরা ইউক্যালিপটাসের গুঁড়ি দিয়ে দেওয়াল মজবুত করার কাজও শুরু করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় মানুষ দাবি তোলেন, পুরো ১ কিমি এলাকা জুড়ে পাড় সুরক্ষার কাজ করতে হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে সে সুযোগ নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy