স্কুলের অনুমোদন দেয় শিক্ষা দফতর। কিন্তু স্কুলের শৌচাগার তৈরি করে কে? সাফাইয়ের দায়িত্বই বা কার?
শিক্ষিকাদের বদলি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীরোগ-উক্তি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আর তা নিয়ে হাওড়া জেলার মেয়েদের স্কুলগুলির অবস্থা জানতে গিয়ে ওই দুই প্রশ্নে বিভ্রান্তি সামনে আসছে। কারণ, এখানকার অনেক বালিকা বিদ্যালয়েরই শৌচাগারের অবস্থা তথৈবচ। এ জন্য সরকারি নীতিকে যেমন অনেকে দায়ী করেছেন, তেমনই পার্থবাবুর মন্তব্যেও আপত্তি শোনা গিয়েছে। অথচ, স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘শৌচাগার থেকে মেয়েদের সংক্রমণ অনেক বেশি হয়। ফলে, সেগুলি সাফ করার জন্য যত্নবান থাকার দরকার আছে।’’
জেলায় মোট হাইস্কুলের সংখ্যা ৬২২। তার মধ্যে মেয়েদের স্কুল শ’খানেক। কো-এডুকেশন স্কুল গোটা ৫০। বাকি ছেলেদের স্কুল। তবে, সব স্কুলেই শিক্ষিকা রয়েছেন। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগার তৈরির জন্য স্কুলে টাকা দেওয়া হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শৌচাগারের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। সর্বশিক্ষা দফতর আবার সব স্কুলে টাকা দেয় না বলে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ।
সর্বশিক্ষা দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিকের দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগারের জন্য যে সব স্কুল টাকা চায়, তাদেরই দেওয়া হয়। শৌচাগার সাফাইয়ের দায়িত্ব জেলা মিড-ডে মিল দফতরের। তাদের এ বাবদ টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শৌচাগার তৈরির ব্যাপারটি দেখে জেলা পরিষদ।’’ জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘আমরা ঠিক সে ভাবে দেখি না। অনেক বছর আগে যখন জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলাম, তখন জেলার স্কুলগুলিকে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। তাতে তারা ভেঙে যাওয়া শৌচাগার মেরামত করেছিল।’’ জেলা মিড-ডে মিল দফতরের কর্তারা দাবি করেছেন, স্কুলের শৌচাগার সাফাইয়ের দায়িত্ব তাঁদের নয়। উল্টে তাঁদের অভিযোগ, প্রতিটি হাইস্কুলে গড়ে ১২ জন রাঁধুনি থাকেন মিড-ডে মিল রান্নার জন্য। স্কুলে তাঁদেরই কোনও আলাদা করে শৌচাগার নেই। তাঁরা ছাত্রীদেরই শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হন।
বাগনান আদর্শ স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ১৯০০। শিক্ষিকা রয়েছেন ৩০ জন। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে তিনটি শৌচাগার। শিক্ষিকাদের তিনটি। তার মধ্যে একটি বর্ষাকালে জল ঢুকে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায় না। বাকি দু’টি শৌচাগারের প্রতিটি একসঙ্গে একাধিক জনের ব্যবহার করার উপায় নেই। ছুটির সময়ে শিক্ষিকাদের তাই লাইনে দাঁড়াতে হয়। ছাত্রীদের শৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। প্রধান শিক্ষিকা বিদিশা রায় বলেন, ‘‘শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের শৌচাগার আরও বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।’’
এই স্কুলে ছাত্রীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং যন্ত্র বসানো হলেও এটি বর্তমানে অচল। ন্যাপকিন ব্যবহার করে তা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ছাত্রীরা ব্যবহার করা ন্যাপকিন শৌচাগারে একটি ড্রামে জমা করে রাখে, যা শৌচাগারের পরিবেশকে আরও অস্বাস্থ্যকর করে। শৌচাগারে জলের ট্যাপ আছে। অধিকাংশ সময়ে সেগুলি বিগড়ে যায় বলেও অভিযোগ।
স্কুল সভাপতি সমীর বসু এই অব্যবস্থার জন্য সরকারি নীতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘শৌচাগার তৈরি এবং সাফাইয়ের জন্য সরকারের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা অর্থ বরাদ্দ নেই। মেয়েদের স্কুলে অন্তত একজন স্থায়ী সাফাইকর্মী রাখা দরকার। আমরা বার বার বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা বলেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। আমরা পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে খুব কম বেতনে একজন সাফাইকর্মী রেখেছি। কিন্তু এ ভাবে কী হয়? স্কুলে শিক্ষিকাদের জন্য যে তিনটি শৌচাগার আছে তার মধ্যে একটি পুরনো, স্কুল পরিচালন সমিতি করেছিল। বাকি দু’টির একটি অভিভাবকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে করা হয়েছে। অন্যটি সরকারের অন্য খাতের টাকা ভেঙে।’’
বাগনানেরর অন্য একটি মেয়েদের স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা ছাত্রীদের ১৮টি শৌচাগার তৈরি করেছেন স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে। আরও ছ’টি শৌচাগারের দরকার হলেও টাকা নেই। সর্বশিক্ষা মিশন থেকেও কোনও টাকা পাননি। ৩৫ জন শিক্ষিকার জন্য মাত্র একটি শৌচাগার আছে। সেটিও স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং চাঁদা তুলে করা হয়েছে।
এই যেখানে অবস্থা, সেখানে শিক্ষিকাদের স্ত্রীরোগ হওয়া স্বাভাবিক এবং সে জন্য তাঁরা বদলির আবেদন করতেই পারেন, বলছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy