প্রতীকী ছবি।
আগেই ব্লক প্রশাসনের তরফে ‘নির্মল বিদ্যালয়’, ‘শিশুমিত্র’ পুরস্কার পেয়েছে হুগলির হরিপালের প্রত্যন্ত এলাকা চিত্রশালীর গজা উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে প্রকৃতি-পাঠের জন্য বাগানও করা হয়েছে। এ বার ছাত্রীদের স্বাস্থ্যরক্ষাতেও এগিয়ে এল স্কুল। স্কুলেই নিখরচায় মিলবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। প্রতি মাসে শিক্ষিকারাই তা ছাত্রীদের হাতে তুলে দেবেন। মঙ্গলবার থেকে চালু হল এই নতুন ব্যবস্থা।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৬০ জন। তার মধ্যে ছাত্রী ২৮০ জন। বেশিরভাগই তফসিলি জাতি, উপজাতি বা সংখ্যালঘু পরিবারের। অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। এলাকাটি আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া। দারিদ্র এবং সচেতনতার অভাবে এখানকার বহু মহিলা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। কাপড়ের উপরেই তাঁরা নির্ভরশীল। ফলে, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্কুলের মেয়েরা সচেতন ছিল না। অস্বস্তি ঢাকতে ঋতুস্রাবের সময় অনেকেই স্কুল কামাই করত। সম্প্রতি কলকাতার বালিগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ছাত্রীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘সমস্যার কথা বলতেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। প্রতি মাসে মেয়েদের হাতে ন্যাপকিন তুলে দেওয়া হবে। শিক্ষিকারাই বিষয়টি দেখভাল করবেন।’’
শিক্ষিকারা জানান, বালিগঞ্জের ওই সংস্থার সহায়তায় চার বছর ধরে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্য-পরীক্ষা চলছে। মাসে দু’দিন এক জন চিকিৎসক ‘চেম্বার’ করেন। সেখানে অনেক ছাত্রীকেই দেখা যায়, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার অভাবে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছে। কারণ, তারা সাধারণ কাপড় ব্যবহার করে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতেই ন্যাপকিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের ‘কো-এড’ স্কুলে এই উদ্যোগ সম্ভব হল কী করে?
শিক্ষিকারা জানান, ছাত্রীদের মধ্যে জড়তা কাটাতে ব্লক প্রশাসনের তরফে ‘অন্বেষা’ প্রকল্পে কাউন্সেলিংয়ের সময় বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়। তাঁরাও মেয়েদের অবহিত করেন। পড়ুয়াদের মায়েদেরও বোঝানো হয়। এ সব করেই সঙ্কোচ কেটেছে অনেকটাই। ইংরেজি শিক্ষিকা সাথী গায়েন বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আমরা ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়েও বুঝিয়েছি। ছাত্রদেরও বোঝানো হয়েছে, ঋতুস্রাব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।’’ প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণচন্দ্রবাবু জানান, মেয়েদের শৌচাগারে ন্যাপকিন নষ্ট করর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে। তাতে দূষণের সম্ভাবনা নেই। কিছু দিনের মধ্যেই ছাত্রীদের পরিবারের মহিলাদেরও এই সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
নতুন উদ্যোগে খুশি ছাত্রীরা। নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘আমাদের অনেক বাড়িতেই ন্যাপকিন কিনে পয়সা খরচ করা হয় না। দোকানে গিয়ে ন্যাপকিন কিনতেও লজ্জা লাগে। দিদিমণিদের কাছে সেই সমস্যা নেই।’’ আর এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘স্যার-দিদিমণিরা বুঝিয়েছেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা কেন জরুরি। আমরা এ বার অন্যদেরও বোঝাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy