দুমড়েমুচড়ে: দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলগাড়িটি। সোমবার, লিলুয়ায়। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়কে বেপরোয়া ট্রাকচালকদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে ব্যর্থ, ফের তার প্রমাণ মিলল।
দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা ট্রাক ধাক্কা মেরেছিল একটি স্কুলগাড়িকে। তার জেরে সেই স্কুলগাড়ি জাতীয় সড়কের বিপরীত লেনে ছিটকে যায়। ফলে আরও একটি ছোট মালবাহী গাড়ি ধাক্কা মারে স্কুলগাড়িটিকে। সোমবার সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে লিলুয়ার জয়পুর বিলের কাছে। দুর্ঘটনায় চার জন আহত হয়েছেন। বেপরোয়া ভাবে আসা ওই ট্রাকটিও দুর্ঘটনার জেরে উল্টে যায়। স্কুলগাড়ি ও মালবাহী গাড়িতে থাকা দু’জন চালক ও দু’জন সহকারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ওই দুর্ঘটনার জেরে আপ ও ডাউন লেনে এ দিন সকালে যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ধূলাগড়ের দিক থেকে একটি ফাঁকা ট্রাক ডানকুনির দিকে প্রচণ্ড গতিতে যাচ্ছিল। তখন সামনে ছিল একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ফাঁকা স্কুলগাড়ি। তাতে চালক ছাড়াও এক জন আরোহী ছিলেন। তীব্র গতিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে পিছন থেকে ওই স্কুলগাড়িটিকে ধাক্কা মারে। ১৬ চাকা ট্রাকের ধাক্কায় স্কুলগাড়িটি প্রায় উড়ে গিয়ে পড়ে পাশের লেনে। অন্য দিকে সেটিকে ধাক্কা মেরে ট্রাকটিও রাস্তার পাশে উল্টে যায়। ওই সময়ে উল্টো দিক থেকে বেশ জোরেই আসছিল ছোট মালবাহী গাড়িটি। আচমকা একটা গাড়ি পাশের লেন থেকে সামনে এসে পড়ায় আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি ওই গাড়িটির চালক। তিনি সজোরে মুখোমুখি ধাক্কা মারেন সামনের স্কুলগাড়িটিকে। ধাক্কার চোটে দু’টি গাড়ি উল্টে যায়। এর জেরে দু’পাশের রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে ট্রাকটির চালক ও খালাসি পালিয়ে যান। মালবাহী গাড়ির চালক আজাদ আলি ও সহকারী রশিদ আলি সর্দার গুরুতর আহত হন।
দু’জনেই বিহারের বাসিন্দা। অন্য দিকে গুরুতর আহত হন স্কুলগাড়িটির চালক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহকারী রাজেশ ঘোষ। তাঁরা দু’জনেই বেলঘরিয়ার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লিলুয়া থানার পুলিশ এসে আহতদের প্রথমে কোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুর বিলের কাছে রাস্তার এক পাশে উল্টে পড়ে রয়েছে ট্রাকটি।
উল্টো দিকের লেনের এক পাশে পড়ে রয়েছে স্কুলগাড়ি এবং মালবাহী গাড়িটি। রাস্তায় ছড়িয়ে কাচের টুকরো। সব থেকে ক্ষতি হয়েছে স্কুলগাড়ি ও ছোট মালবাহী গাড়িটির। দু’টিরই সামনের অংশ ভেঙে ঢুকে গিয়েছে। গাড়ির ভিতরে ও নীচে তখনও চাপচাপ রক্ত। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক বাসিন্দা রশিদ আলি সর্দার বলেন, ‘‘ট্রাকটি অন্তত ১০০ কিলোমিটার গতিতে এসে স্কুলগাড়িটির পিছনে ধাক্কা মারে। সেটিতে পড়ুয়ারা না থাকায় বড় ধরনের বিপদ এড়ানো গিয়েছে।’’
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জয়পুর বিলের কাছে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশের কোনও নজর কিংবা নিয়ন্ত্রণ নেই স্কুলগাড়ির উপরে। এলাকার বাসিন্দা বিশ্বনাথ মাজি বলেন, ‘‘রাস্তায় টহলদারি ভ্যান না থাকায় এখানে চালকেরা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালান। তাতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অবিলম্বে এই জায়গায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের উপরে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে সব সময়েই মোবাইল ভ্যান থাকে। মাঝেমধ্যে বেশি গতির জন্য ধরপাকড়ও হয়। এ দিন ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy