Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

চক্ষুদানে বাইকে চেপে প্রচারে হুগলির চার

পথচলার ফাঁকে ভিড় দেখলেই বাইক থামিয়ে চলছে প্রচার। অন্ধত্ব দূরীকরণে মরণোত্তর চক্ষুদান কতটা জরুরি— সেটাই বুঝিয়ে চলেছেন ওঁরা।

উদ্যোগ: শান্তিনিকেতনে চলছে সচেতনতা মূলক প্রচার। নিজস্ব চিত্র

উদ্যোগ: শান্তিনিকেতনে চলছে সচেতনতা মূলক প্রচার। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৫০
Share: Save:

দাবি একটাই। কেউ মারা গেলে চোখ দু’টি যেন বাঁচিয়ে রাখা যায়!

এই দাবি নিয়েই শহর থেকে গ্রাম, রাজপথ থেকে অলিগলি চষে ফেলছেন ওঁরা চার জন। সঙ্গী দু’টি মোটরবাইক। পথচলার ফাঁকে ভিড় দেখলেই বাইক থামিয়ে চলছে প্রচার। অন্ধত্ব দূরীকরণে মরণোত্তর চক্ষুদান কতটা জরুরি— সেটাই বুঝিয়ে চলেছেন ওঁরা।

সুরজিৎ শীল, উত্তমকুমার সেন, বুদ্ধদেব মাঝি এবং অনন্ত সার। প্রত্যেকেরই বাড়ি হুগলির জাঙ্গিপাড়ায়। সুরজিৎ তাঁত বোনেন। অনন্ত সরকারি কর্মী। উত্তম হাতুড়ে। বুদ্ধদেব অ্যাম্বুল্যান্স চালান। জাঙ্গিপাড়ার রাজবলহাট কালচারাল সার্কল ও সেবায়ন নামে দু’টি সংস্থা মরণোত্তর চক্ষু সংগ্রহের কাজ করে। চার জনেই ওই দুই সংস্থার সদস্য।

সুরজিতের বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় মরণোত্তর কর্নিয়া সংগ্রহের জন্য আবেদন জানাতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ধ্যানধারণা নেই। তাই তাঁরা এই অভিযানের পরিকল্পন‌া করেন শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষুব্যাঙ্কের সহযোগিতায়।

শুক্রবার হোলির সকালে রাজবলহাটের শীলবাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে যাত্রার সূচনা করেন জয়েন্ট বিডিও (জাঙ্গিপাড়া) মেহনলাল বর এবং রাজবলহাট-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সদন ঘোষ।

হুগলি, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া— দক্ষিণবঙ্গের এই সব জেলায় ঘোরার কর্মসূচি নিয়ে বেরিয়েছেন‌ ওই চার জন। বিভিন্ন জেলায় মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান নিয়ে যে সব সংস্থা কাজ করে, রাতে সেখানেই থাকছেন তাঁরা।

সন্ধ্যায় সেই সংস্থার লোকজনও সামিল হচ্ছেন প্রচারে। শুক্রবার তাঁরা ছিলেন ‘দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’তে। শনিবার সকালে শান্তিনিকেতনে প্রচার চলে। সন্ধ্যায় ‘মুর্শিদাবাদ আই কেয়ার অ্যান্ড ডোনেশন সোসাইটি’তে পৌঁছন। আজ, রবিবার মুর্শিদাবাদ থেকে কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর হয়ে রানাঘাটে পৌঁছনোর কথা।

বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘মৃত্যুর পরে দেহ পুড়িয়ে অথবা কবর দেওয়া হয়। এ ভাবে মৃতের চোখ দু’টি নষ্ট না করে মৃত্যুর চার থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে তা সংগ্রহ করে দৃষ্টিহীন দু’জনের চোখে প্রতিস্থাপিত করা যায়। তাতে তাঁরা পৃথিবীর আলো দেখতে পারেন। মানুষকে সহজ ভাষায় এই কথাটাই বোঝাচ্ছি।’’

সুরজিৎ বলেন, ‘‘মৃতের কর্ণিয়া সংগ্রহের ব্যাপারে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই। অনেকে অন্ধবিশ্বাসের কারণে প্রিয়জনের চোখ দিতে অস্বীকার করেন। তবে লাগাতার প্রচারের সুফলও মিলছে। গত কয়েক বছরে হুগলির কিছু জায়গায় মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে।’’

উত্তমবাবু জানান, জীবিত অবস্থায় মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করা না থাকলেও সমস্যা নেই। মৃত্যুর পরে প্রিয়জনেরাই চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা বিশ্বদীপ মৈত্র পথে বেরিয়ে সুরজিতদের মুখোমুখি হন। তাঁদের বক্তব্য শোনেন। এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি। আগামী মঙ্গল অথবা বুধবারে হুগলির শ্রীরামপুরে এসে শেষ হবে চার জনের এ বারের অভিযান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE