বিপদ: কামারপুকুরের শ্রীপুরে হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তার পাশে লোহার ছাঁটমালের রমরমা কারবার। ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা টিন। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গোঘাটের কামারপুকুর যখন সেজে উঠছে, তখন তাঁরই দলের স্থানীয় কিছু নেতার মদতে রাস্তা জবরদখল করে ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠল। রাস্তা জবরদখল হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। ছড়াচ্ছে যানজট। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
কামারপুকুরকে কেন্দ্র করে সংলগ্ন আড়াই কিলোমিটার এলাকায় সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। পরিবহণ দফতর হাইমাস্ট আলো বসিয়েছে সেখানে। আলোয় সেজেছে গোটা এলাকা। ওই দফতর কামারপুকুরে আধুনিক একটি বাস টার্মিনাস তৈরি করছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে কেএমডিএ নির্মিত বৈদ্যুতিক শ্মশানচুল্লি। সাতটি নতুন রাস্তাও করে দিচ্ছে ওই সংস্থা।
কামারকুণ্ডু জুড়ে উন্নয়নের এই কর্মসূচিতে খুশি স্থানীয় লোকজন। তবে এর পাশাপাশি বেশ কিছু অভিযোগও উঠে এসেছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, “শাসকদলের কিছু নেতার মদতে কামারপুকুর চটির কাছে মূল সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার দখল করে করে ব্যবসা করছে অনেকে। পূর্ত দফতর এবং তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদাসীনতায় এই অবৈধ কাজ চলছে। একাধিকবার পূর্ত দফতর এবং পঞ্চায়েতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোনও ফল হয়নি।” পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হচ্ছে, রাস্তাকে দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতরও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ-বাঁকুড়া রাস্তার গোঘাটের কামারপুকুর চটি থেকে লাহাবাজার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার অংশ জুড়ে ভাঙা লোহা-লক্করের ব্যবসা চলছে। রাস্তা দখল করে পানগুমটি এবং চায়ের দোকান তৈরি হয়েছে। কামারপুকুরের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে সারাবছরই ভক্ত সমাগম হয়। ওই এলাকা থেকে ৭ কিমোমিটার দূরে জয়রামবাটির সারদা মন্দির। ফলে বাঁকুড়ার দিক থেকে আসা একাধিক রুটের বাস ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ওই রাস্তার গায়েই আছে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বিডিও কার্যালয়ে যেতেও ওই পথ ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে সারা দিনে গড়ে ১,৫০০ গাড়ি চলাচল করে পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গেছে। রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।
জবরদখলে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা প্রায় ১৫০ জন এখানে ব্যবসা করি। তবে রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা দূরেই আমাদের ব্যবসা চলে। তাতে রাস্তায় গাড়ি চলচলে কোনও ব্যাঘাত ঘটে না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই ব্যবসা করছি। তবে বিশেষ কোনও নেতার নাম বলে রোষের মুখে পড়তে চাই না।’’ রাস্তা থেকে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের যে পরিকল্পনা প্রশাসনের তরফে নেওয়া হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘তাহলে আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবতে হবে পঞ্চায়েত এবং পূর্ত দফতরকে।”
রাস্তা জবরদখলের কথা স্বীকার করে নিলেও তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন কামারপুকুর পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভপতি তপন মণ্ডল। তিনি বলেন, “অন্যায় ভাবে রাস্তা দখল করে লোহার ছাঁট এবং টিনের ব্যবসা চলছে সেখানে। তবে এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। পূর্ত দফতরকে রাস্তা জবরদখল মুক্ত করতে একাধিক বার বলার পরেও কিছু হয়নি। এ বার পঞ্চায়েত রাস্তা দখলমুক্ত করতে কড়া পদক্ষেপ করবে।”
পূর্ত দফতরের (সড়ক) কামারপুকুর শাখা কার্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “স্থানীয় লোকজন বাধা দিতে পারেন, এই আশঙ্কা করে রাস্তাকে জবরদখল মুক্ত করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।” এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি দফতরের মহকুমা সহকারী বাস্তুকার সুনীতি বিশ্বাসের। বেশ কয়েক বার ফোন করার পরে এক বার ফোন ধরেন ওই আধিকারিক। তারপর ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy