Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Father

খেলার মাঠে পাওয়া টাকা ফেরালেন বাবা-ছেলে

বাবা ছেলেকে নিয়েই মাঠে গিয়ে প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন সেই টাকা।

শিক্ষা: পড়ার মাঝে শুভঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষা: পড়ার মাঝে শুভঙ্কর। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৮
Share: Save:

ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে তিন হাজার টাকা কুড়িয়ে পেয়েছিল বছর দশেকের ছেলেটি। কী করবে বুঝতে না-পেরে ছুটে বাড়ি এসে তুলে দিয়েছিল বাবার হাতে। বাবা ছেলেকে নিয়েই মাঠে গিয়ে প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন সেই টাকা।

রবিবার, উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়া সনাতন স্পোর্টিং ক্লাবে ওই ম্যাচ খেলতে আসা নলপুরের রনিত মিদ্দে শেষ পর্যন্ত তাঁর হারিয়ে যাওয়া টাকা ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ওই টাকায় তাঁর সংসার চালানোর কথা। আর যিনি ওই টাকা ফেরত দিলেন, এলাকার সেই দিনমজুর সুশান্ত দাস বলেন, ‘‘ছেলেটা ছোট। বোঝেনি বলে টাকাটা বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিল। ওকে বুঝিয়ে ফেরত দিলাম। পরের টাকা যে নেওয়া উচিত নয়, এটা ওর একটা শিক্ষা হল।’’

ফুটবল ম্যাচটির উদ্যোক্তারা অবশ্য মনে করছেন, বাবা-ছেলের এই দৃষ্টান্তে গ্রাম ও ক্লাবের নাম উজ্জ্বল হল। সনাতন স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য শিবু অধিকারী বলেন, ‘‘টাকাটা হারিয়ে যাওয়ার পর বারে বারে মাইকে প্রচার করেছি। টাকাটা যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরত পাব ভাবিনি। সুশান্তবাবু ও তাঁর ছেলের জন্য আমরা গর্বিত।’’

পাড়ার মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতা দেখতে রবিবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালেই হাজির হয়ে গিয়েছিল সুশান্তবাবুর ছেলে শুভঙ্কর। ফাইনালের সময় মাঠে প্রায় হাজার পাঁচেক দর্শক ছিল। ছিলেন সুশান্তবাবুও। হাড্ডাহাড্ডি খেলা দেখে দর্শকেরা যখন উত্তেজিত, তখনই মোড়া অবস্থায় ৬টি ৫০০ টাকার নোট পড়ে থাকতে দেখে সেখানে থাকা শুভঙ্কর। সে টাকাটা কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। যে দু’টি দলের মধ্যে ফাইনাল হয়, তারই একটির খেলোয়াড় ছিলেন রনিত। খেলা শেষে তিনি জানতে পারেন, তাঁর টাকা খোয়া গিয়েছে। ওই টাকা তিনি দর্শকাসনে থাকা বন্ধু বাবাই কাঁড়ারের কাছে রেখেছিলেন। কিন্তু খেলার উত্তেজনায় লাফালাফি করতে গিয়ে বাবাইয়ের পকেট থেকে টাকা কোনও ভাবে পড়ে যায়।

প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তারা ঘটনার কথা জানতে পেরে ঘন ঘন মাইকে প্রচার করতে থাকেন। সেই ঘোষণা সুশান্তবাবুও শোনেন। বাড়ি ফিরে ছেলের হাত থেকে টাকা পেয়ে তাই তিনি আর দেরি করেননি। ছেলেকে নিয়েই মাঠে ফেরেন। ততক্ষণে রনিত ও তাঁর বন্ধু মন খারাপ করে ফিরে গিয়েছেন। ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁদের ফোনে টাকা ফেরত পাওয়ার কথা জানানো হয়।

বাবাই বলেন, ‘‘খেলা দেখতে দেখতে কখন রনিতের টাকাটা পড়ে গিয়েছিল, বুঝতে পারিনি। অপরাধ বোধও কাজ করছিল ভেবেছিলাম বাড়ি গিয়ে ধার করে ওর টাকা শোধ করে দেব। ফোনটা আসায় ধড়ে প্রাণ পেলাম।’’ রনিত বলেন, ‘‘খেলাধুলো করেই রোজগার করি। সেই টাকাতেই সংসার চলে। বাবাই যখন বলল, টাকা হারিয়েছে, কী করব বুঝতে পারছিলাম না। সুশান্তবাবু ও তাঁর ছেলেকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’’

দুই ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সুশান্তবাবুর সংসার। ঘরে অভাব সর্বত্র। ছেলেদের যাতে কোনও খারাপ মানসিকতা তৈরি না হয়, সে চেষ্টা করে চলেছেন সুশান্তবাবু ও তাঁর স্ত্রী। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ওইটুকু ছেলে যদি পরের টাকা নিতে থাকে, ওর মন অন্য রকম হয়ে যেতে পারে। ছেলেকে বোঝালাম, যাঁর টাকা হারিয়েছে, তিনি হয়তো দুঃখ পাচ্ছেন। তাঁর ওই টাকা খুব প্রয়োজন। তাই ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। ছেলে বুঝল। বাবা হিসেবে আর কী চাই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Father Son Uluberia Honesty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy