Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

রূপনারায়ণ পাল্টে দিয়েছে জীবিকা, কাস্তে ছেড়ে চাষি এখন ভাটা-শ্রমিক

জীবিকার-টানে: রূপনারায়ণের তীরে গড়ে উঠেছে এমন ইটভাটা। ছবি: সুব্রত জানা

জীবিকার-টানে: রূপনারায়ণের তীরে গড়ে উঠেছে এমন ইটভাটা। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪
Share: Save:

নদীবাঁধ আছে। কিন্তু নদী কোথায়?

শ্যামপুরের ডিহিমণ্ডলঘাট থেকে রাধাপুর পঞ্চায়েত সংলগ্ন মায়াচর পর্যন্ত রূপনারায়ণের বাঁধ ধরে হাঁটলে চোখে পড়ে শুধু ইটভাটা আর হোগলা বন। চর পড়ে রূপনারায়ণ সরে গিয়েছে আরও অন্তত এক কিলোমিটার দূরে।

‘‘নদী দেখতে হলে আপনাকে বাঁধ থেকে ইটভাটা ও হোগলার বন পার হয়ে অন্তত এক কিলোমিটার হাঁটতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে চর পড়ে এই হাল হয়েছে রূপনারায়ণের।’’— ডিহিমণ্ডলঘাটে নদীবাঁধে দাঁড়িয়ে বললেন লালু আড়ং। আগে ছিলেন বোরো চাষি। এখন ভাটা-শ্রমিক।

শুধু কী লালু আড়ং! ডিহিমণ্ডলঘাট, কমলপুর, রাধাপুর এবং আশপাশের এলাকার বহু গ্রামবাসীই এখন বোরো চাষ ছেড়ে ভাটায় কাজ করছেন। চাষ হবে কী ভাবে? বোরো চাষে সেচের জল লাগে। কিন্তু চর পড়ে যাওয়ায় দূরত্বের কারণে রূপনারায়ণ থেকে সেচের জল জমিতে আনা যাচ্ছে না। লালুবাবু বলেন, ‘‘বোরো চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে ভাবে চাষিরা বেকার হয়ে যান, তাতে ভাটাগুলি না থাকলে অনেকে না-খেয়ে মরতেন।’’ একই ভাবে জীবিকা পাল্টে গিয়েছে মৎস্যজীবীদেরও। তাঁরাও ভাটায় কাজ করছেন। কারণ, নাব্যতা হারানো রূপনারায়ণে মাছও অমিল।

ওই নদ সংস্কারের দাবিতে ‘রূপনারায়ণ বাঁচাও কমিটি’র পদযাত্রা শুক্রবার চতুর্থ দিনে পড়ল। ডিহিমণ্ডলঘাটে এসে কমিটির সদস্যেরা চাষিদের জীবিকা পাল্টে যাওয়ার কথা শুনে অবাক হয়েছেন। কমিটির অন্যতম কর্তা মহেন্দ্র রায় বলেন, ‘‘চাষিদের হাতে থাকার কথা ছিল কাস্তে। কিন্তু অবস্থা বেগতিক। কাস্তে ছেড়ে চাষিদের এখন ভাটায় কাজ করতে যেতে হচ্ছে। এই নদের বুকেই চাষিরা বিকল্প জীবিকা খুঁজে নিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু এই পথ কি কাম্য ছিল? সময়মতো ড্রেজিং হলে চাষিদের ভাটায় কাজ করতে হতো না।’’ আজ, শনিবার গাদিয়াড়ায় সমাবেশের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শেষ হওয়ার কথা।

ভূমি দফতরের কাছ থেকে চরের জমি ‘লিজ’ নিয়ে গড়ে উঠেছে ভাটাগুলি। কিন্তু এই ব্যবসা নিয়ে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগও বিস্তর। তাঁদের অভিযোগ, ‘লিজ’-এর কাগজে যে পরিমাণ মাটি নেওয়ার কথা বলা হয়, তার থেকে অনেক বেশি মাটি তুলছে অধিকাংশ ভাটা। ভাঙন থেকে ভাটা বাঁচানোর জন্য অনেক ভাটা-মালিক নিজেদের মতো করে বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধাচ্ছেন। ফলে, সেই বোল্ডারে ধাক্কা খেয়ে নদীর গতিপথ পাল্টাচ্ছে। ভাঙন হচ্ছে অন্যত্র। সব জেনেও প্রশাসন নীরব। চাষিদের অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে তাঁদের কাজে লাগাচ্ছেন ভাটা-মালিকেরা। গ্রামবাসীরা মনে করছেন, যদি নদে নিয়মিত ড্রেজিং এবং সেচ খালগুলি সংস্কার করা হতো তা হলে চাষিরা চাষ বন্ধ করতেন না। রমরমা কমত ভাটাগুলির। শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডেরর টাকা জমা না করারও অভিযোগ উঠেছে ভাটা-মালিকদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে।

ফরওয়ার্ড ব্লক প্রভাবিত ভাটা-শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অসিতবরণ সাউ বলেন, ‘‘শ্যামপুরের অর্থনীতি দু’টি বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। চাষ আর ইটভাটা। রূপনারায়ণে চর পড়ায় ডিহিমণ্ডলঘাট এবং সংলগ্ন এলাকায় বোরো চাষ বন্ধ। ফলে, ভাটার উপরে শ্রমিকদের চাপ বাড়ছে। তাঁদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সেটা মাথায় রেখেই আমাদের বিভিন্ন‌ আন্দোলনের কথা ভাবতে হয়। যতই হোক না কেন, হাজার হাজার মানুষের রুটি-রুজি এতে জড়িত।’’

শ্যামপুর থানা এলাকার ভাটা-মালিক সংগঠনের কর্তা বনদেব মাজি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ভাটা-মালিকরা কোনও বেনিয়ম করেন না। নিয়মিত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হয়। আমরাও দেখি, যাতে কোনও ভাটা-মালিক বেআইনি কাজ না করেন। শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আনার জন্য সব ভাটাতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Brick Clan Rupnarayan River Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy