Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
গ্রামীণ হাওড়ায় পুলিশি নজরদারি জোরদার

বেআইনি বাজি কারখানা অবাধেই চলে হুগলিতে

বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণ হাওড়া কিছুটা সফল হয়েছে। কিন্তু হুগলি পারল কই?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নুরুল আবসার
চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ন্ত্রণে গ্রামীণ হাওড়া কিছুটা সফল হয়েছে। কিন্তু হুগলি পারল কই?

কালীপুজোর পরে বর্ষবরণের রাতেও দেদার শব্দবাজি ফেটেছে হুগলিতে। বিয়েবাড়িতেও এখন শব্দবাজি ফাটানো রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। নৈহাটিতে বাজি বিস্ফোরণে পাঁচ জনের মৃত্যুর পরে পরিবেশপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, হুগলিতে বেআইনি বাজি কারবারে লাগাম কবে পরবে?

পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে এখনও বাজি কারবারিদের জন্য সরকারি উদ্যোগে কোথাও কোনও ‘ক্লাস্টার’ তৈরি হয়নি। ফলে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এখনও খানাকুলের নতিবপুর, গোঘাটের রাধাবল্লভপুর, চণ্ডীতলার বেগমপুর, সিঙ্গুরে বাসুবাটী এবং ধনেখালি-জাঙ্গিপাড়ার একাংশে লুকিয়ে-চুরিয়ে শব্দবাজি তৈরি হয়ে চলেছে। চণ্ডীতলার এক বাজি কারবারির দাবি, ‘‘কেন আমরা সব সময় পুলিশের ভয়ে থাকব? সরকার আমাদের লাইসেন্স দিক না।’’

বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের তরফে নড়াচড়া হয় ঠিকই। কিন্তু কিছুদিন পরেই নজরদারিতে শিথিলতা আসে বলে পরিবেশপ্রেমীদের দাবি। আর তার ফাঁক গলেই অবাধে হয়ে চলে শব্দবাজি তৈরি। না হলে উৎসব-অনুষ্ঠানে শব্দবাজি কোথা থেকে আসে এ প্রশ্নও উঠছে। চন্দননগরের পুলিশ

কমিশনার হুমায়ুন কবীরের দাবি, ‘‘শব্দবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। কমিশনারেট এলাকায় কোনও বেআইনি বাজি কারখানা নেই।’’ গ্রামীণ হুগলিতে েবআইনি বাজি কারখানা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু।

১৯৮৪ সালে বাজি বিস্ফোরণে চন্দননগরের পাদ্রিপাড়ায় একসঙ্গে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। সেটাই ছিল জেলা তথা রাজ্যের প্রথম বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা। এর বছর তিনেক পরে পাদ্রিপাড়ার কাছে ফের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ছ’জনের মৃত্যু হয়। তারপরেও জেলার নানা জায়গায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মৃতদের পরিবারগুলি আজ পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি।

পাদ্রিপাড়ার বিস্ফোরণে মৃত কার্তিক চক্রবর্তীর দিদি প্রতিমা নৈহাটির ঘটনা জানার পরে শনিবার বলেন, ‘‘আমার ভাই তখন ১৮ বছরের তরতাজা তরুণ ছিল। সরকার এক টাকাও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এখন তো বিষমদ খেয়ে কেউ মারা গেলে সরকার টাকা দিচ্ছে। আমরা কী দোষ করলাম? ভাই তো সেই সময় বাড়ির একমাত্র রোজগার করত।’’ এমন হা-হুতাশ রয়েছে প্রিয়জন হারানো অনেকের। বছর কয়েক আগে ধনেখালির বোসোতে ভয়াবহ বাজি বিস্ফোরণে দুই মহিলা-সহ ছ’জন মারা যান। সেই সময় গ্রামে পুলিশকর্তাদের ঘেরাও করে রাখেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, ‘‘রুটি-রুজির প্রশ্নে গ্রামের মানুষ বাজি তৈরিকে পেশা হিসেবে নেন। সরকার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করুক অথবা বাজি তৈরিকেই আইনি স্বীকৃতি দিক।’’

কিন্তু সেই দাবি এখনও পূরণ হয়নি। ফলে, হুগলিতে বেআইনি বাজি কারবারে লাগামও পরেনি।

পাশের জেলা হাওড়া অবশ্য ওই কারবারে অনেকটাই লাগাম পরাতে পেরেছে। পুলিশের দাবি, নিয়মিত অভিযানে দেখা হয়, বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি হচ্ছে কিনা। কেউ বিপজ্জনক ভাবে বাজির মশলা মজুত করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মাত্র কিছু ক্ষেত্রে অসংগঠিত ভাবে বছরে কিছুদিনের জন্য আতসবাজি তৈরি হয়।

১৯৯৩ সালে কালীপুজোর ঠিক আগে বাগনানের হাটুরিয়া গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ২১ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। তারপর

থেকেই জেলায় বাজি কারখানার উপরে শুরু হয় কড়া নজরদারি। ফলে, বেআইনি বাজি তৈরির কারখানা অনেকটাই কমেছে। রাজাপুরের মালপাড়া এলাকাটি কয়েক বছর আগেও বাজি তৈরির প্রসিদ্ধ ছিল। কালীপুজোর সময়ে শব্দবাজি তৈরি হত। তবে পুলিশ ঘন ঘন হানা দেওয়ায় এখন শব্দবাজি তৈরি বন্ধ। শুধু আতসবাজি তৈরি হয়। শ্যামপুরের কিছু এলাকায় খেলা, উৎসব, বিয়েবাড়ির জন্য গাছবোমা তৈরি হয়। বছর কয়েক আগে গাছবোমা তৈরি করতে গিয়ে দু’জন‌ের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিয়মিত হানা দিতে থাকে। ফলে, গাছবোমা তৈরির কাজও গ্রামবাসীরা কমিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Cracker Factory blust
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy