Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পাশে স্ত্রী, বিলের মাচায় ‘নিভৃত-যতনে’

হুগলির বলাগড় ব্লকের কালিয়াগড় পূর্বপাড়ার জয়দেব বিশ্বাস পেশায় চাষি। মে মাসের গোড়ায় তিনি সাইকেলে পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারিতে গিয়েছিলেন।

ঘরকন্না: বাঁশের মাচায় নিভৃতবাসে দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

ঘরকন্না: বাঁশের মাচায় নিভৃতবাসে দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

জয়দেব প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৫:০০
Share: Save:

চারপাশে খলবল করছে রুই, কাতলা, মৃগেলের ঝাঁক। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তালগাছ, নারকেল গাছ। পাশে খেতে পাট, ওল, বেগুনের চাষ দিয়েছেন কৃষক। খানিক দূরে কলাবাগান।

এ তল্লাটে বাড়িঘর নেই। প্রয়োজন ছাড়া কারও পা পড়ে না। দিন কতক ধরে এখানেই অবশ্য ‘ঘরকন্না’ করছেন এক প্রৌঢ় দম্পতি। এক ফালি বাঁশের মাঁচায় চলছে সংসার। তাঁদের ঘর রয়েছে। কিন্তু ‘করোনাকালে’ কোয়রান্টিনে কাটানোর জন্য এমনই নিভৃত পরিসর খুঁজে নিয়েছেন তাঁরা।

হুগলির বলাগড় ব্লকের কালিয়াগড় পূর্বপাড়ার জয়দেব বিশ্বাস পেশায় চাষি। মে মাসের গোড়ায় তিনি সাইকেলে পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারিতে গিয়েছিলেন। ক’দিন পরে ছেলে ফোনে জানান, এখন বাড়িতে ঢুকলে পাড়া-পড়শিরা আপত্তি করতে পারেন। ভেবেচিন্তে শেষতক বাপ-ছেলে ঠিক করেন, মেমারি থেকে ফিরে দু’সপ্তাহ কাটাবেন বাদাম বিলে।

গত বৃহস্পতিবার গাঁয়ে ফিরে জয়দেব সটান চলে যান বিলের মাচায়। কিন্তু ফাঁকা চৌহদ্দিতে একা থাকতে সাহসে কুলোচ্ছিল না। তাই পরের দিনই স্ত্রী অঞ্জলিও চলে আসেন। পাশেই লিজের জমিতে জয়দেব পাট আর বেগুন চাষ করেছেন। ভোর-ভোর উঠে তিনি সেই গাছের পরিচর্যা করেন। মাচায় ফিরতে বেলা সাড়ে ১২টা বাজে। পুত্রবধূ খাবারদাবার, জল দিয়ে যান। খেয়েদেয়ে খানিক বিশ্রাম সেরে ফের মাঠে যান জয়দেব। ক্রমে আঁধার নামে। শুনশান পল্লিতে হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় সুখ-দুঃখের কথা বলে দিন শেষ হয় দম্পতির।

সন্ধ্যায় মাঠ থেকে ফিরে বাড়ির কাছেই চৌমাথায় আড্ডায় মশগুল হতেন জয়দেব। বহু বছরের এই রোজনামচায় ছেদ ফেলেছে নিভৃতবাস-পর্ব। তবে স্ত্রী সঙ্গে থাকায় নির্জনেও ভালমন্দে কেটে যাচ্ছে। জয়দেব বলেন, ‘‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে, প্রতিবেশীরা যখন চাইছেন, আরও ক’টা দিন এখানে কাটিয়ে দেব। বউ সঙ্গে থাকায় কোনও সমস্যা নেই।’’ একরত্তি নাতির জন্য মন কেমন করে অঞ্জলির। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষটা একা থাকবে, তাই চলে এলাম।’’

জিরাট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অশোক পোদ্দার বলেন, ‘‘ওই দম্পতি স্বেচ্ছায় ওখানে আছেন। আমরা খোঁজ রাখছি। কোনও অসুবিধা হলে পঞ্চায়েত নিশ্চয়ই দেখবে।’’

কালিয়াগড়ের শেষ প্রান্তের ওই বিল জিরাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অধীন। বর্তমানে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন জনৈক তপন দাস। ভূগোলের স্কুলশিক্ষক তপন জানান, বিলটি গঙ্গার পরিত্যক্ত অংশ বা নদী উপত্যকা। সেই হারানো নদী প্রবাহে রাত পাহারার জন্য তৈরি মাচা যে ওই দম্পতিকে নিভৃতবাসে রাখার ঠিকানা হয়ে উঠেছে, তাতেই তপন খুশি।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy