স্তব্ধ: জাকিরের পোশাক তৈরির কারখানায় বন্ধ মেশিন। নিজস্ব চিত্র
নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে ডোমজুড়ের শাঁখারিদহকে।
রেডিমেড পোশাক তৈরির এ তল্লাটে আর শোনা যাচ্ছে না সেলাই যন্ত্রের ঘর ঘর শব্দ। পর পর কারখানার ঝাঁপ বন্ধ। শ্রমিক-মালিকেরাই বা কোথায়?
এখানে ঘরে ঘরে এই সে দিনও রেডিমেড পোশাক তৈরি হতো। শ্রমিক-মালিকদের হইচই, ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখর থাকত এলাকা। লকডাউনে সব বন্ধ। আর্থিক দুশ্চিন্তায় একই ভাবে ডুবেছেন শ্রমিক-মালিকেরা।
এখানে কারখানা-মালিককে বলা হয় ‘ওস্তাগর’। জাকির মুফতি তেমনই একজন। তাঁর কারখানায় মেয়েদের স্কার্টের ‘টপ’ বানানো হয়। ২০ জন দর্জি কাজ করেন। এ ছাড়া ‘প্যাকেজিং’ এবং ইস্ত্রি করার আলাদা লোক আছেন। জাকিরের কাজ— থানকাপড় সংগ্রহ করে এনে দর্জিদের দিয়ে ‘টপ’ বানিয়ে নেওয়া। তারপরে ‘প্যাকেজিং’ শেষে হাওড়া হাট এবং মেটিয়াবুরুজ হাটে বিক্রি করা। লকডাউনে সব বন্ধ। ১৮টি সেলাই মেশিনে ধুলো জমছে। জাকিরের কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। ‘প্যাকেজিং’-এর কাজ করেন বিহারের বৈশালী থেকে আসা শেখ রফিক। লকডাউনের আগে দর্জিরা বেতন নিয়ে নিজের নিজের গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। আর ফিরতে পারেননি। একমাত্র থেকে গিয়েছেন রফিক। কিন্তু কাজ নেই। ফলে, হাত গুটিয়ে বসে আছেন তিনি। কাজ না-থাকায় বেতন পাচ্ছেন না। ফলে, বিহারে স্ত্রীর কাছে টাকাও পাঠাতে পারছেন না।
রফিকের খেদ, ‘‘স্ত্রী টাকা চেয়ে ফোন করছে। কিন্তু মালিকের কাছেই বা টাকা চাইব কোন মুখে? পরিস্থিতি তো দেখতে পাচ্ছি।’’ জাকির বলেন, ‘‘লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই হাওড়া হাট ও মেটিয়াবুরুজ হাট করোনার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। থানকাপড়ের দোকানও বন্ধ। দর্জিরা ফিরে গিয়েছেন। কী করে চলবে কারখানা?’’ জাকিরের খরিদ্দররা আসেন মূলত ওড়িশা থেকে। তিনি বলেন, ‘‘খরিদ্দারদের কাছে বহু টাকা পড়ে আছে। হাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লকডাউন চলছে। খরিদ্দাররা আসতে পারছেন না। টাকাও আদায় হচ্ছে না। আমিও টাকা না পেয়ে থানকাপড়ের দাম মেটাতে পারছি না। সব কিছু যেন জট পাকিয়ে গিয়েছে।’’
শেখ রফিকের মতো জাকিরের কাছে কাজ করা অন্য শ্রমিকেরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ‘দেশে’ ফিরে গেলেও তাঁদের হাতেও কাজ নেই। বাড়িতেই কোনও রকমে দিন গুজরান করছেন। জাকিরের কথায়, ‘‘ওই দর্জিরা আমার কাছে বহু বছর ধরে কাজ করছেন। জমানো টাকা থেকে তাঁদের হয়তো এক মাসের টাকা আগাম দিতে পারি। কিন্তু যদি লকডাউন চলতে থাকে, কী হবে? আমাদের কাছে তো নগদ টাকা বেশি থাকে না। টাকা পড়ে আছে খরিদ্দারদের ঘরে। নিজের সংসার চালানোই মুশকিল হচ্ছে।’’
সামনেই ইদের বাজার আসছে। তাতেও ছবিটা বদলাবে কিনা, সংশয়ে রয়েছেন জাকির। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর পুজোর বাজার ভাল যায়নি। প্রচুর স্টক জমে আছে। সেটা এ বার ইদে ছাড়ব ভেবেছিলাম। কিন্তু এসে গেল করোনা। কী যে হবে বুঝতে পারছি না। আমাদের রেডিমেড পোশাক ব্যবসা শেষ হয়ে গেল।’’ এই ছবি শুধু জাকিরের কারখানার নয়, শাঁখারিতলার অন্য পোশাক কারখানাগুলিরও। ডোমজুড়ের বেগড়ি, উনসানি, বাকড়া, অঙ্কুরহাটি, কোরলা প্রভৃতি এলাকাতেও হাজার হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। ওস্তাগর এবং দর্জি মিলিয়ে এই পেশায় জড়িত লক্ষাধিক মানুষের মনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো ছায়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy