প্রতীকী ছবি
ঘটনা ১: রবিবার বেলা ৩টে। ‘লকডাউন’-এর বাধা পেরিয়ে কোনও রকমে ঘরে ফিরেছিলেন খানাকুলের হোসেন মুন্সি। খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে হাজির হন কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার আর গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে বাড়ি ছাড়তে হবে হোসেনকে। না হলে গ্রামে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। গ্রামবাসীর চাপে ঘরে ফেরার এক ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে। ১১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাত ১০টায় তিনি ফেরেন কর্মস্থল মেটিয়াব্রুজে। সেখানে একটি এটিএম-এর নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করেন তিনি।
ঘটনা ২: ক্যামাক স্ট্রিটে একটি ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করেন খানাকুলের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা মুন্সি মহম্মাদুল হক। রবিবার তিনিও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ফিরেছিলেন বাড়ি। সেই খবর পেয়েই রে-রে করে তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন এলাকার বেশ কয়েকজন। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্যও ছিলেন সেই দলে। তাঁদের চাপে ঘর ছাড়তে হয় মহম্মাদুলকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘লকডাউন’ বলবৎ করতে ‘কড়াকড়ি’ চলবে। ‘বাড়াবাড়ি’ নয়। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কাউকে হেনস্থা করা চলবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বাস্তব বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই ঘরে ফিরে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের।
হোসেন বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের নির্দেশে টানা কয়েকটিন ডিউটি করার পরে বাড়ি গিয়েছিলাম অনেক ঝক্কি করে। চাঁপাডাঙা পর্যন্ত গিয়েছিলাম একটি আলুর গাড়িতে চেপে। তারপর হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলাম। বাড়ি ফেরার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিভিক ভলান্টিয়ার আর পঞ্চায়েতের কয়েকজন এসে আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলে। আমি ব্যাঙ্কের নথি দেখাই। কিন্তু ওঁরা কিছুই শুনতে রাজি ছিলেন না।’’ হোসেনের সংযোজন: ‘‘ওদের চাপে আমি ঘর থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ১১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রাত ১০টায় মেটিয়াব্রুজ ফিরি। আমি এখন একটা গ্যারেজে থাকছি।’’
মহম্মাদুলের অভিযোগ, ‘‘আমি ব্যাঙ্কে কাজ করি। সেই নথিও দেখিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকে জোর করে তাড়িয়ে দিল। বাড়ি না ছাড়লে পুলিশে দেবে বলে হুমকিও দেয়। সঙ্গে পঞ্চায়েতের লোকজনও ছিল। ওঁদের হম্বিতম্বি দেখে কাঁদতে শুরু করেন আমার স্ত্রী আর দুই ছেলে। আমি বাধ্য হয়েই ফিরে আসি।’’ হোসেন ও মহম্মদুলের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনও সুরাহা হয়নি।’’
কী বলছে প্রশাসন?
বিডিও (খানাকুল-১) দেবাশিস মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনার কথা জানা নেই। এখন শুনলাম। খবর নিয়ে দেখছি কী করা যায়।’’ তাঁতিশাল পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বিকাশ রায়ের দাবি, ‘‘আমাকে একটি ঘটনার কথা ফোনে জানিয়েছিলেন কয়েকজন ভিলেজ পুলিশ (সিভিক ভলান্টিয়ার)। ওঁদের বলি, লকডাউন চলায় আমি যেতে পারব না। সব কিছু পুলিশ এবং ব্লক অফিসে জানাতে বলেছিলাম।’’ খানাকুল থানার এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা করোনা সংক্রমণের হটস্পট থেকে এসেছিলেন বলেই হয়তো গ্রামবাসীর আতঙ্ক বেশি ছিল। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী-ই বা করতে পারি। এলাকাবাসী যদি না বোঝেন, আমরা তো তাঁদের জোর করে বোঝাতে পারব না।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘এই পরিস্থিতিতে লকডাউন কেটে যাওয়ার পরেই ঘরে ফেরা ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy