Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

জুটমিল স্তব্ধ, অন্যত্র কম শ্রমিকেই কাজের প্রস্তুতি

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৫% লোক নিয়ে জুটমিলগুলিতে কাজ চালু করা যাবে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫৯
Share: Save:

সরকারি নির্দেশমতো সোমবার থেকে বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রে লকডাউন-বিধি শিথিল হল। কিছু ক্ষেত্রে কম শ্রমিকেই কাজের প্রস্তুতি শুরু হলেও দুই জেলাতেই স্তব্ধ রইল জুটমিল।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৫% লোক নিয়ে জুটমিলগুলিতে কাজ চালু করা যাবে। কিন্তু বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বলে আসছে, এত স্বল্প সংখ্যক লোক নিয়ে জুটমিলে উৎপাদ‌ন সম্ভব নয়। হাওড়ার বিভিন্ন জুটমিলের মালিকেরাওও একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

হাওড়ায় ১৩টি জুটমিল আছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে তার মালিকেরা শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা জানিয়ে দেন, জুটমিলের ৯টি বিভাগ একসঙ্গে চালাতে না পারলে খরচটুকুও উঠবে না। সে জন্য অন্তত ৩৫% শ্রমিক প্রয়োজন। মালিকদের একাংশ জানান, ৩৫% শতাংশ শ্রমিক নিয়োগের অনুমতি চেয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। উত্তর এলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

আইএনটিটিইউসি-র হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা চাই লকডাউন চলাকালীন সব নিয়ম মেনে যে ভাবে জুটমিল চালানোর কথা সরকার বলেছে, সে ভাবে চলুক। শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত আছেন।’’

হুগলির কোনও জুটমিলেও এ দিন নড়াচড়া দেখা যায়নি। শ্রমিকেরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন লকডাউন পর্বের মজুরি নিয়ে। এআইটিইউসি অনুমোদিত ‘ফেডেরাল চটকল মজদুর ইউনিয়ন’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্ত জানান, এই বিষয়ে রবিবার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। বর্ষীয়ান ওই নেতার কথায়, ‘‘পনেরো শতাংশ শ্রমিক দিয়ে জুটমিলে মজুত সামগ্রী বের করা যায়, উৎপাদন করা যায় না। চালাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শ্রমিক নিয়ে চালানোর কথা ভাবা দরকার। না হলে বাকি শ্রমিকদের কী হবে? শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা দরকার।’’

ইটভাটায় ১৫% শ্রমিককে কাজের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। সূত্রের খবর, লকডাউনের মধ্যে হুগলির কয়েকটি ইটভাটায় টুকটাক কাজ হয়েছে। সোমবারেও অনেক ভাটায় অল্পস্বল্প কাজ হয়। হাওড়ার শ্যামপুরের ভাটাগুলিতে কাজ চালু হয়নি। ভাটা-মালিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা ভাটা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। তবে তারা একথাও জানিয়েছেন, বহু ভাটায় কয়লা নেই। কয়লা আনার অনুমতি না মিললে চুল্লি জ্বলবে না। একইসঙ্গে ইট বিক্রির অনুমতিও দিতে হবে। না হলে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া যাবে না।

চাষিরা জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক পর থেকে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু ধান কাটার যন্ত্র বা খেতমজুর মিলবে কিনা, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে। হুগলিতে ধান কাটার জন্য বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া থেকে শ্রমিকরা আসেন। লকডাউনে সেখান থেকে লোক আসা কার্যত অসম্ভব। আরামবাগের রামনগরের চাষি বিদ্যাপতি বাড়ুই বলেন, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পে ধান কাটার কাজ হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকাংশেরই জমি রয়েছে। তাঁরা নিজের জমির ধান কাটতেই ব্যস্ত থাকবেন। আবার, সব জমিতে যন্ত্র নিয়ে পৌঁছনো যাবে না। যন্ত্র পাওয়ারও নিশ্চয়তা নেই।’’

জেলা কৃষি দফতর অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ দেখছেন না। তারা জানিয়েছে, হুগলিতে এ বার বোরো ধান চাষ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলা কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদারের বক্তব্য, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হবে। শ্রমিক বা যন্ত্র পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকেরাও কৃষিকাজ করতে পারবেন। চাষিরা যাতে হাতের কাছে ধান কাটার যন্ত্র পান, সে ব্যবস্থা হচ্ছে। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ শুরু হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা (ধান্য উন্নয়ন) পার্থ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আগামী বছরে বীজধান পেতে কোনও অসুবিধা যাতে না হয়, সেই জন্য বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে শ্রমিকেরা কাজ শুরু করছেন।’’

হুগলির বিভিন্ন জায়গায় ১০০ দিনের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এই কাজে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে কাজ হয়, সেই চেষ্টা করা হবে।

বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘এখানে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক দিয়ে ১০০ দিনের কাজ হবে। শ্রমিকদের দু’টি করে মাস্ক দেওয়া হবে। গ্লাভস দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করছি বুধবার থেকে কাজ চালু হবে।’’

হাওড়ায় অবশ্য ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy