স্তব্ধ: কাজ বন্ধ কারখানায়। নিজস্ব চিত্র
দেশীয় শিল্প। তবে, বাজার মূলত বিদেশে। দেশ এখন গৃহবন্দি। বিদেশের বাজারেও তালা। পরিস্থিতির জেরে তাই নাভিঃশ্বাস উঠছে শ্রীরামপুরের এক ছোট শিল্পের।
শহরের তারাপুকুর এলাকার একটি কারখানায় চটজাত নানা সামগ্রী তৈরি হয়। যেমন, ব্যাগ, ঝুড়ি, ট্রে, কিট-ব্যাগ, ঘর সাজানোর জিনিস ইত্যাদি। ওই সব জিনিস পাড়ি দেয় ভিন্ দেশে। কিন্তু করোনার বিশ্বজোড়া থাবায় এখন কাজ বন্ধ। এই সঙ্কট কতদিন চলবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনায় ডুবেছেন কারখানার শ্রমিকেরা।
তারাপুকুরের বাসিন্দা দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় ওরফে শিবু জানান, বছর আটেক আগে রবিশঙ্কর সিংহ এবং সঞ্জীব চক্রবর্তী নামে দুই বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে এই ব্যবসা শুরু করেন। চারদিকে যখন প্লাস্টিকের রমরমা, তখন চটশিল্পকে আঁকড়ে ধরেন তাঁরা। হুগলি, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জুটমিল থেকে চটের কাপড় কেনা হয়। সুতির কাপড়ও কিছু কিনতে হয়। কাপড় কেটে নকশা করার পরে সেলাই করে নির্দিষ্ট জিনিসের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়। ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইজ়রায়েল, আমেরিকা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং-সহ নানা দেশে সেগুলি রফতানি করা হয়। অল্প পরিমাণ সামগ্রী যায় লখনউ, মুম্বই, নয়ডার মতো জায়গায়।
জনাচল্লিশ শ্রমিক ওই কারখানায় কাজ করেন। দেবব্রত বলেন, ‘‘কারখানার শেডের ভাড়া গুনতে হচ্ছে। শ্রমিকদের এই মাসের টাকা অনেকটাই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন খারাপ অবস্থা চলতে থাকলে তখন কী হবে? বসিয়ে বসিয়ে মজুরি দেওয়ার পরিস্থিতি তো থাকবে না!’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখন চটকলে বস্তা তৈরি হবে। আমাদের কাঁচামাল কবে পাব, জানি না। আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস বাজার থেকে কিনতে হয়। বাজারই বা কবে খুলবে? এর থেকেও বড় কথা, করোনা ত্রাসে বিদেশে বিশেষত ইউরোপের যাচ্ছেতাই অবস্থা। আন্তর্জাতিক বাজার স্বাভাবিক না হলে জিনিস তৈরি করেও লাভ হবে না।’’
দেবব্রত জানান, এ দেশে লকডাউন হওয়ার আগে থেকেই অন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের পরে সামগ্রী পাঠানো যায়নি। ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য অনেক সামগ্রী তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। চলতি মাসে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক ‘ট্রেড শো’ হওয়ার কথা ছিল। করোনার জন্য ওই বাণিজ্য প্রদর্শনী বাতিল হয়েছে। দেবব্রত বলেন, ‘‘বিদেশি ক্রেতারা ওখানে আমাদের জিনিস পছন্দ করে অর্ডার দেন। বাজার ধরার ওই প্রক্রিয়া মাঠে মারা গেল।’’
স্থানীয় কানাই রায়ও একই সমস্যায় জর্জরিত। শ্রীরামপুরের সারদা পল্লির বাসিন্দা কানাইয়ের কারখানায় চটের ফিতে তৈরি হয়। ঘর সাজানোর কাজের জিনিসের উপকরণ হিসেবে তা ব্যবহৃত হয়। চটের কাপড় কেটে ওই ফিতে তৈরি হয়। কাজ করেন জনাকুড়ি শ্রমিক। এই কারখানাতেও কাজ বন্ধ। কানাইয়ের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে জিনিস তৈরি হয়ে কলকাতা এবং অন্য রাজ্যে যায়। সেখান থেকে বিদেশে। লকডাউনের জেরে পুরো ব্যবসা স্তব্ধ। শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন। ওঁদের যতটা সম্ভব সাহায্য করছি। কিন্তু এ ভাবে কতদিন টানা যাবে? কবে কাঁচামাল পাব, কবে বাজার স্বাভাবিক হবে, সে দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের আর উপায় কী। আমাদের মতো ক্ষুদ্রশিল্পের বড় দুর্দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy