তন্ময়: নিজের কাজে বুঁদ শুভঙ্কর। নিজস্ব চিত্র
রং-তুলিতে একটু একটু করে ফুটে উঠছে অবয়ব। মানুষের মুখ।
সমাজ ‘তালাবন্দি’। চাকা ঘুরছে না কল-কারখানায়। অসহায়, বুভুক্ষু শ্রমিক পরিবারগুলি খাবার খুঁজছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ক্যানভাসের ছবিই হাতিয়ার শেওড়াফুলির সরকারপাড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর সিংহরায়ের।
বছর ত্রিশের শুভঙ্কর পেশাদার শিল্পী। ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের বিএফএ (ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস) ডিগ্রিধারী। মুখাবয়ব আঁকাই তাঁর বিশেষত্ব। কিন্তু লকডাউনে তিনি ঘরবন্দি। কাজ বন্ধ। তবে, ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে তিনি বসে থাকতে চান না। তিনি ঠিক করেছেন, নিজের দক্ষতাকে সম্বল করে গোন্দলপাড়ার শ্রমিক পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন।
প্রায় দু’বছর ধরে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া চটকল বন্ধ। সেখানকার কয়েক হাজার শ্রমিকের পরিবারের লোকেরা আগে থেকেই দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছিলেন। এর উপরে নেমে এসেছে লকডাউনের খাঁড়া! এই পরিস্থিতিতে শুভঙ্করের কয়েক জন বন্ধু নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ইতিমধ্যেই ওই পরিবারগুলির মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শুভঙ্কর মানুষের পোর্ট্রেট এঁকে অর্থ সংগ্রহ করে তা বন্ধুদের হাতে তুলে দেবেন বলে ঠিক করেছেন। এ ভাবেই গোন্দলপাড়ার শঅরমিকদের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গত বুধবার তিনি ফেসবুকে লেখেন, কেউ তাঁকে ছবি (পোর্ট্রেট) আঁকার বরাত দিলে তিনি দু’শো টাকার বিনিময়ে তা করবেন। টাকা অনলাইনে পাঠিয়ে দিতে হবে। সেই টাকা জমিয়ে তিনি বন্ধুদের হাতে তুলে দেবেন। পোস্ট দেখে অনেকেই তাতে সাড়া দিচ্ছেন। শুক্রবার বিকেলে শুভঙ্কর বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করেছি। এখনও পর্যন্ত তিনটে ছবি এঁকেছি। ইচ্ছে আছে, প্রতিদিন দু’টো করে ছবি আঁকব। তা হলে দিনে চারশো টাকা অসহায় পরিবারগুলোর জন্য দিতে পারব।’’ আরও গোটাকতক ছবি আঁকার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পেয়েছেন তিনি। যুবকের পোস্ট দেখে তাঁকে ছবি আঁকার কথা প্রথম বলেন তাঁর স্কুলের সহপাঠী গৌরব গঙ্গোপাধ্যায়। শ্রীরামপুরের বাসিন্দা গৌরবের কথায়, ‘‘শুভঙ্করের উদ্যোগ খুব ভাল। আমি ওঁর মাধ্যমেই সামান্য টাকা অসহায় মানুষদের জন্য দিতে পারলাম।’’ শুভঙ্করের হাতের মুন্সিয়ানায় গৌরব খুশি। নিজের ছবিও বেশ পছন্দ হয়েছে তাঁর। আঁকা ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন শুভঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন মিটলে ছবি পৌঁছে দেব। কাছাকাছি কেউ হলে বাড়িতে দিয়ে আসব। কেউ এসেও নিয়ে যেতে পারেন। দূরের ক্ষেত্রে স্পিড পোস্ট বা ক্যুরিয়র করে দেব।’’ চন্দননগরের বাসিন্দা, শুভঙ্করের বন্ধু অভিষেক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কিছু বন্ধু মিলে শ্রমিক পরিবারের হাতে কিছু খাবার তুলে দিচ্ছি নিজেদের চাঁদায়। শুভঙ্কর যে ভাবে আমাদের সাহায্যের কথা জানিয়েছে, তাতে ভাল লেগেছে। এটা ওঁর সুন্দর মানসিকতার পরিচয়।’’
শুভঙ্কর নিজেও শ্রমিক পরিবারের সন্তান। বাবা বিশ্বনাথ সিংহরায় প্লাইউড কারখানায় কাজ করেন। পরিবার খুব একটা সচ্ছল নয়। বাবার স্বল্প রোজগারে চলা সংসারে একটা খাতা-পেন্সিলও যে কতটা হিসেব কষে কিনতে হয়, শুভঙ্কর বিলক্ষণ জানেন। কারখানা বন্ধের জ্বালা বোঝেন। শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের যন্ত্রণা অনুভব করেই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ছবিকে আঁকড়ে ধরছেন তিনি।
ছেলের এমন উদ্যোগে বাবা বিশ্বনাথ, মা রূপালিদেবী খুশি। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘আমার কারখানাও বন্ধ। জমানো টাকায় সংসার চলছে। তবে ছেলের কাজে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এমন কঠিন সময়ে মানুষের পাশে তো দাঁড়াতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy