বৈপরীত্য: নিয়ম-বিধি মানা হচ্ছে না গ্রামীণ হাওড়ার গরুহাটা বাজারে (বাঁ দিকে)। পুরসভার উদ্যোগে আরামবাগের বয়েজ স্কুল মাঠের আনাজ বাজারে আসা সকলকেই স্যানিটাইজ় করা হল (ডান দিকে)। ছবি: সুব্রত জানা ও সঞ্জীব ঘোষ
ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। রেশন দোকানে ভিড়। গরুহাটা মাঠের বাজারে মাছি গলার জো নেই!
গোটা হাওড়া জেলাকে ‘রেড জ়োন’ থেকে ’রেড স্টার জ়োন’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবারই তিনি ‘কড়া দাওয়াই’ দিয়েছেন। জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, অনেক হয়েছে, আর নয়। ‘টোটাল লকডাউন’ হবে। প্রয়োজনে হাওড়ায় সশস্ত্র পুলিশ নামবে।
সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরে, শনিবার হাওড়ার সিটি পুলিশ এলাকায় কড়াকড়ি দেখা গেলেও গ্রামীণ এলাকায় সেই ছবি কোথায়? প্রতি সপ্তাহের মতো এ দিন গরুহাটা মাঠের বাজারে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ব্যাঙ্কে, রেশন দোকানেও ভিড় চোখে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ‘কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না’ এবং ‘মেলামেশা বন্ধ করতে হবে’ বললেও তা বন্ধে জেলা (গ্রামীণ) পুলিশকে বিশেষ উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেক সাধারণ মানুষই। অকারণে মোটরবাইক নিয়ে ছুট এ দিনও দেখা গিয়েছে উলুবেড়িয়া, বাগনান, শ্যামপুর-সহ নানা এলাকায়। একাধিক বাজারে শারীরিক দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে ভিড় করেছেন মানুষ। রাস্তায় চলেছে অটো-টোটো।
অবশ্য কিছু দোকান খুলে রাখার অভিযোগে শুক্রবার উলুবেড়িয়া শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে থানা থেকে তাঁরা ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান। পুলিশ কাজ না-করায় অনেক এলাকার বাসিন্দারা ক্লাবের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। নিমদিঘি বাজারের ভিড় সামলাচ্ছেন স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরাই।
পুলিশের বিরুদ্ধে নজরদারিতে উদাসীনতার অভিযোগ মানতে চাননি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায়। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ সব সময় নজরদারি চালাচ্ছে। বারবার মাইকে সচেতন করা হচ্ছে। লকডাউন ভাঙার জন্য অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মানুষকে নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।’’
হুগলিতে পুলিশ প্রশাসন অবশ্য আরও কষে কোমর বেঁধেছে। নির্বাচনের কায়দায় জেলায় ঢোকার পথ ‘সিল’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জলপথেও শুরু হয়েছে পুলিশের নজরদারি। জেলার অন্তত ৩০টি জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় প্রবেশ পথে ‘লগবুক’ থাকবে। প্রবেশের সময় ‘লগবুকে’ তা লেখা হবে। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ঢোকা বা বেরোনোর অনুমতি দেওয়া হবে না। পুলিশ সূত্রের খবর, বালিখালে হাওড়া ও হুগলি জেলার সীমানায় শনিবার থেকে ‘থার্মাল গান’ রাখা হচ্ছে। বিশেষ কাজে যাতায়াত করতে হলেও সেখানে লোকজনকে ওই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বর্ধমান জেলার সীমানায় বৈঁচীতে জিটি রোডে ‘নাকা’ করেছে পুলিশ। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চলছে।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘অকারণে বাইরে বের হওয়া রুখতে প্রশাসন আরও কঠোর হবে। পুলিশকে বলা হয়েছে, অকারণ ঘোরাফেরা দেখলেই ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে। চুঁচুড়ায় প্রশাসনিক ভবন থেকে সিসিটিভি-তে জেলার প্রবেশপথে নজর রাখা হবে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, পরিস্থিতির গভীরতা বুঝে পুলিশ আরও কঠোর হবে। বেলা ১২টার পরে বাজার খোলা রাখা যাবে না। বিনা কারণে কেউ বাইরে বেরোলেই গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে থানাগুলিকে। প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন ঘটনায় ২৫০ থেকে ৩০০ জন গ্রেফতার হচ্ছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনা প্রতিরোধে রিষড়া পঞ্চায়েতের মোল্লাবেড়ের উপরে এদিন বিশেষ নজর দেওয়া হয়। প্রধান গীতা দাস জানান, পঞ্চায়েতের তরফে নির্দিষ্ট এলাকা ধরে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। মোল্লাবেড় থেকে দিল্লি রোডে ওঠার রাস্তা আটকানো হয়েছে। অভিযোগ, ওই এলাকায় গ্রামবাসীদের জমায়েত হচ্ছে। চায়ের দোকানে আড্ডা জমছে। এই বিষয়ে পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের তরফে প্রচার চলছিলই। মসজিদের মাইক থেকেও বার বার প্রচার করা হচ্ছে। এ বার প্রচার বাড়ানো হচ্ছে।’’
বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় ভিড় করা লোকজন কার্যত লুকোচুরি খেলছে বলে অভিযোগ। পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ব্যবস্থাই নিচ্ছি। এলাকা স্যানিটাইজ় করা থেকে প্রচার— সবটাই চলছে। থার্মাল গান দিয়ে শহরবাসীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। জমায়েত বন্ধ করতে ড্রোনের সাহায্য নেওয়া হবে।’’
শ্রীরামপুরের মাহেশ বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশাসনের মাথাব্যথা ছিল। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় জানান, দু’দিন ধরে ওই বাজারের আনাজ বা মাছের দোকান অনেকটা ছড়িয়ে বসছে। বাজার কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে দোকানের মধ্যে দূরত্ব যাতে আরও বাড়ানো যায়। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরাও থার্মাল গানের সাহায্যে বাড়ি বাড়ি জ্বর পরীক্ষার কাজ শুরু করেছি। নতুন কেনা দু’টি ছোট যন্ত্রের সাহায্যে বিশেষত বহুতল স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় বহনযোগ্য যন্ত্র নিয়ে গিয়ে স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে।’’
ক্রেতাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শনিবার আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন বাজার বাঁশের আগল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। হাট-বাজারে ‘ড্রপ গেট’ করা হয়েছে। পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছে। মাস্ক না থাকলে বাজারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ দিন শহরের বাজারগুলি স্যানিটাইজ় করে দমকল। ক্রেতাদের শরীরেও ওই দ্রবণ ছেটানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy