Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

স্কুল ছেড়ে গঙ্গাপাড়ে তাঁবুতেই নিভৃতবাস

তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের থাকার কথা ছিল গ্রামের স্কুলে।

এ ভাবেই রয়েছেন শ্রমিকরা। শনিবার মিলনগড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

এ ভাবেই রয়েছেন শ্রমিকরা। শনিবার মিলনগড়ে। ছবি: সুশান্ত সরকার

সুশান্ত সরকার
বলাগড় শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

গঙ্গাপাড়ে গোটাকতক তাঁবু পড়েছে বলাগড়ের মিলনগড়ে। এক দিকে মধ্যমপাড়ার ১৫ জন ঠাঁই নিয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণপাড়ার ৯ জন। মাঝে হাত বিশেকের দূরত্ব।

তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের থাকার কথা ছিল গ্রামের স্কুলে। কিন্তু ভিন্ রাজ্য থেকে কয়েক দিন আগে-পরে ফেরা নিয়ে বিতণ্ডায় দু’দলই স্বেচ্ছায় তাঁবুবাসী হয়েছে। সেখানেই চলছে নিভৃতবাস।

বিডিও (বলাগড়) সমিত সরকার বলেন, ‘‘ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ৬৭টি স্কুলে নিভৃতবাস আছে। ওই গ্রামের ছেলেদের জন্যও নির্দিষ্ট স্কুলে ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওঁরা নিজেরাই তাঁবুতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে ওঁদের ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে।’’

পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই যুবকেরা মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে রাজমিস্ত্রি অথবা সোনা পালিশের কাজ করতেন। গত ৩০ মে দক্ষিণপাড়ার ৯ যুবক ফেরেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তাঁরা ওঠেন মিলনগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার মধ্যমপাড়ার ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এলে প্রশাসনের তরফে তাঁদেরও ওই স্কুলে থাকতে বলা হয়। কিন্তু দক্ষিণপাড়ার যুবকেরা তাঁদের ঢুকতে দিতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা সুস্থ রয়েছেন। নতুন কেউ ঢুকলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে। তাই কারও সঙ্গে একই জায়গায় তাঁরা থাকবেন না। এ নিয়ে দু’পক্ষের বচসা হয়। শেষে তাঁরা নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করেন, সকলেই গঙ্গাপাড়ে থাকবেন।

সেইমতো বাঁশ, চট, ত্রিপল দিয়ে মাঠেই তাঁবু পড়ে। বাড়ি থেকে চৌকি, বিছানাপত্র চলে আসে। বিদ্যুৎ সংযোগ হয়। টিন দিয়ে মাঠেই অস্থায়ী শৌচাগার বানানো হয়। পাকা ছাদের আশ্রয় ছেড়ে ২৪ জনই মাথা গোঁজেন তাঁবুতে।

মধ্যমপাড়ার অমিতাভ সরকার, চিম্ময় হালদারদের কথায়, ‘‘প্রশাসনের কথাতেই স্কুলে থাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, ওঁরা আপত্তি করায় ঝগড়া বেঁধে যায়। সমস্যা মেটাতে শেষ পর্যন্ত সবাই তাঁবুতে থাকার কথা মেনে নিয়েছি।’’ দক্ষিণপাড়ার তারক বিশ্বাস, নকুল বিশ্বাসদের বক্তব্য, ‘‘আমরা কয়েক দিন স্কুলে কাটিয়ে ফেলেছিলাম। সবাই সুস্থ। আর এক দল লোকের সঙ্গে থাকলে আমাদের সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকত। বাধ্য হয়েই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হল।’’

গ্রামবাসী সনু মিশ্র বলেন, ‘‘প্রশাসন একটু কড়া হলে স্কুলেই সবাইকে রাখা যেত। ওঁরা তাঁবুতে থাকায় আমরাও চিন্তায় আছি। মাঠে সাপখোপের উপদ্রব। প্রশাসন বিষয়টি ভাবলে ভাল হয়।’’ পঞ্চায়েত প্রধান (শ্রীপুর-বলাগড়) সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুই পাড়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের মন-কষাকষি রয়েছে। দু’পক্ষকেই বুঝিয়েছি। ওঁরা নিজেরাই সিন্ধান্ত নিয়েছেন, গঙ্গার ধারে নিভৃতবাসে থাকবেন।’’ প্রধান জানান, সাপ তাড়াতে কার্বলিক আ্যাসিড দেওয়া হবে।

কালবৈশাখীর ভয় আর মশার উপদ্রব সয়ে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া এক যুবক বলেন, ‘‘রাতে ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না। তবে ক’টা দিন ঠিক চালিয়ে নেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy