প্রতীকী ছবি।
দুর্গাপুজোর পরে ন’দিন পার। ফের হাওড়ায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। যা চিন্তায় ফেলেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। অথচ, পুজোর সময়ে সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে দেখা গিয়েছিল। সুস্থতার হারও বাড়ছিল। কিন্তু সেই ছবি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। তুলনায় পাশের জেলা হুগলিতে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ অক্টোবর হাওড়ায় সংক্রমিত হন ২১৭ জন। ১ নভেম্বর সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২৪৫। ৪ নভেম্বর ২৭৫। অর্থাৎ, রেখচিত্র ঊর্ধ্বগামী।
অথচ, হাইকোর্টের নির্দেশে এ বার পুজো মণ্ডপে তেমন ভিড় হয়নি। তবে, নবমীর দিন প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। সংক্রমণ-বৃদ্ধি সেই কারণেই কিনা, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, এই সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। এই হার পরের দিকে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘উৎসবের মরসুমে যে ভাবে শারীরিক দূরত্ব না মেনেই অনেকে ভিড় বাড়িয়েছেন, এটা তার ফল। শুধু হাওড়া জেলাতেই নয়, গোটা রাজ্যেই সংক্রমণের হার বাড়ছে।’’
জেলায় সামগ্রিক ভাবে সংক্রমিতের হার কমতে শুরু করে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। তবে তা কমার ক্ষেত্রে গতি আসে ওই মাসের শেষ সপ্তাহে। ওই সময় থেকেই সংক্রমিতের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যায় সুস্থতার সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৬ অক্টোবর জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২৪৫। ওইদিন সুস্থ হয়েছিলেন ১২৫ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৭ জনের। মোট পজ়িটিভ রোগী ছিলেন ১৭৪০ জন। তার ঠিক ১০ দিন পরে, ২৫ অক্টোবরের আক্রান্ত হন ২১৬ জন। সুস্থ হন ২৭৭ জন। মৃত্যু হয় ৫ জনের। মোট পজ়িটিভ ছিলেন ১৪৪০ জন। মাসের পরের দিনগুলির করোনা পরিস্থিতিও স্বস্তি দিয়েছিল জেলা প্রশাসনকে।
কিন্তু ছবিটি পাল্টে গেল নভেম্বরের শুরু থেকেই। ১ নভেম্বর সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২৪৫। ওইদিন সুস্থ হন ২২৫ জন। মারা যান ৫ জন। মোট অ্যাক্টিভ রোগী ছিলেন ১৬৬৪ জন। ২ নভেম্বর সংক্রমিত হন ২০২ জন। সুস্থ হন ১২১ জন। মৃত ৭ জন। মোট অ্যাক্টিভ রোগী ছিলেন ১৭৫০। পরবর্তী দিনগুলির ছবিও স্বস্তিদায়ক নয়।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘সচেতনতার সুনির্দিষ্ট প্রচার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মেলবন্ধন ঘটিয়ে সংক্রমণ অনেকটাই রুখে দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু উৎসবের সময়ে ভিড়ের ফলে সব চৌপাট হয়ে যায়।’’
তবে, সংক্রমণ বাড়লেও মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত আছেন বলেও জানান জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বিপদ এড়ানোর একমাত্র পথ হল দ্রুত সংক্রমিতকে চিহ্নিতকরণ এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’’
দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনে হুগলিতে সংক্রমিত হয়েছিলেন ১০০৯ জন। অর্থাৎ, দৈনিক গড়ে ২০০ জনেরও বেশি। পরের ন’দিনে, অর্থাৎ বুধবার পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১৬৬১ জন। দৈনিক গড় ১৮৪.৫৫ জন। এই পরিসংখ্যান দেখেই জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ জন্য পুজোর দিনগুলিতে জন-সচেতনতা বৃদ্ধি, অফিস-কাছারি ছুটি থাকা, সর্বোপরি হাইকোর্টের রায়কেই কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
জেলার একটি সরকারি হাসপাতালের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘পুজোয় অতিরিক্ত ভিড় হলে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। তবে, তেমনটা না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।’’
ঠিক এক মাস আগে, ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর— এই ন’দিনে সংক্রমিত হয়েছিলেন ১৩৫৭ জন। হিসেবে দেখা যাচ্ছে, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ে। অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী হয়। ১৭ অক্টোবর অ্যাক্টিভ আক্রান্ত ছিলেন ১৩৫৫ জন। ২৮ অক্টোবর ওই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৯২৬ জনে। তার পরে অবশ্য একটু একটু করে ওই সংখ্যা কমতে থাকায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের কর্তারা কিছুটা চিন্তামুক্ত। বুধবার অ্যাক্টিভ আক্রান্ত ছিলেন ১৫৯৩ জন।
তবে, এখনই ঢিলে দিতে নারাজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বরং দুর্গাপুজোর সচেতনতা কালী, জগদ্ধাত্রী, কার্তিক বা ছটপুজোর ক্ষেত্রেও দেখতে চাইছেন তাঁরা। বুধবারই কলকাতা হাইকোর্ট সব রকমের বাজি পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ কতটা মানা হচ্ছে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, সংক্রমিতদের কাছে বাজির ধোঁয়া বিষের শামিল হতে পারে।
তবে, সার্বিক ভাবে মাস্ক পরার প্রবণতা যে কমেছে, রাস্তায় বেরোলে তা মালুম হচ্ছে। এ নিয়ে চিকিৎসকেরাও ভাবিত। চিকিৎসক সুমিত তালুকদার বলেন, ‘‘ভাইরাস নাক-মুখ দিয়েই ঢোকে। অতএব রাস্তায় বেরোলে মাস্ক পরা জরুরি। তা হলেই কিন্তু করোনাকে অনেকটা আটকে দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy