প্রতীকী ছবি।
পুজোর আনন্দে বে-খেয়াল হয়ে ঘুরলে করোনা সংক্রমণ কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। যাঁদের শরীরে নানা রোগ (কো-মর্বিডিটি) রয়েছে, চিন্তা বেশি তাঁদের নিয়ে। বিপদ এড়াতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছে বিভিন্ন সামাজিক বা গণ-সংগঠন। চিকিৎসকেরাও ব্যক্তিগত বা সংগঠনগত ভাবে এই কাজ করছেন।
চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর শ্রীরামপুর শাখার উদ্যোগে শনিবার বিকেলে করোনা বিষয়ক আলোচনা হয় বয়স্ক নাগরিকদের নিয়ে। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ষাটোর্ধ্ব মানুষজন কী কী সতর্কতা অবলম্বন করবেন, তার খুঁটিনাটি আলোচনা করেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, করোনা-পর্বে বয়স্ক লোকজন কার্যত গৃহবন্দি। এ জন্য অনেকেই অবসাদে ভুগছেন। ফলে, একটু-আধটু বাইরে বেরনো জরুরি। তবে, ঝুঁকি নেওয়া চলবে না।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঠাকুর দেখতে বেরোলে যথাযথ ভাবে মাস্ক পরতে হবে। নাকের নীচে বা থুঁতনিতে ঝুলিয়ে রাখলে চলবে না। পকেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখতে হবে। পুজোকর্তারা স্যানিটাইজ়ার দিলে ভাল। মণ্ডপে ভিড় থাকলে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। পুষ্পাঞ্জলি বা আরতির সময়েও যথেষ্ট দূরত্ব রেখে দাঁড়াতে হবে।
ভাল হয় অনলাইনে অঞ্জলি দেওয়া গেলে। বাইরে খাবার না খেয়ে প্রয়োজনে কিনে এনে বাড়িতে খেতে হবে। আইএমএ-র শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি চিকিৎসক প্রদীপ দাসের বক্তব্য, করোনার জন্য অতিমাত্রায় সতর্কতা জরুরি। পাশাপাশি, অন্য সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে। যাঁরা নিয়মিত সুগার, প্রেশার বা অন্যান্য রোগের ওষুধ খান বা ইনহেলার নেন, সেই অভ্যাসে যেন ছেদ না পড়ে। পুজোর ভোগ বাড়িতে এনে গরম করে খাওয়া উচিত। খোলা অবস্থায় ভোগ পড়ে থাকলে ব্যাকটিরিয়া জন্মাতে পারে। পেটের রোগ হতে পারে।
করোনাজয়ী, তাঁদের পরিবার, চিকিৎসক এবং সমাজমনস্ক মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক’ সচেতনতা ছড়াতে হুগলিতে ফ্লেক্স, লিফলেট, ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারে নেমেছে। তাদের আশঙ্কা, ঠিকমতো আগল দেওয়া না গেলে আসন্ন শারদোৎসব করোনামুক্তির বড় অন্তরায় হবে।
এ ক্ষেত্রে কেরলের ওনাম উৎসবের উদাহরণ টানা হচ্ছে। সেখানে গত ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১১৪০। ওনাম উৎসবের পরে সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজারে চলে যায়।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরাও ওই উদাহরণ সামনে রেখে মানুষকে সতর্ক করছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা দেওয়া হবে।
সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুজোর পরে সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়লে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। কয়েক মাসের টানা ধকলে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক ক্লান্তি, তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টিও অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
আইএমএ-র উলুবেড়িয়া শাখার সম্পাদক চিকিৎসক শান্তি গের বলেন, ‘‘সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে গেলে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির সমস্যা হবে। চিকিৎসকের সঙ্কট দেখা দেবে। এটা মাথায় রেখে সবাই আনন্দ করুন।’’
এ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি করছে ওই সংগঠন। বর্ষীয়ান চিকিৎসক অনিল সাহা সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা চিকিৎসা করার জন্যই আছি। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, হাসপাতালে শয্যা বা পরিকাঠামো সীমিত। তাই, বাঁধভাঙা আনন্দ করতে গিয়ে বড় বিপদ ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’’
আরামবাগ মহকুমায় অনেক চিকিৎসক সামাজিক মাধ্যমে মানুষকে সজাগ করার চেষ্টা করছেন। চিকিৎসক অশোক নন্দী বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় ভিড় না করে সারাদিন প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হোক। মণ্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, থার্মাল গান রাখা হোক। সব থেকে ভাল হয় মূর্তির পরিবর্তে ঘটপুজো করলে।’’
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy