ছবি: এএফপি।
লকডাউনে কাজ হারিয়ে রোজগার বন্ধ। গাড়ি না চলায় বাড়িও ফিরতে পারছেন না হুগলিতে কাজ করতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কার্যত পেটে কিল মেরে বসে থাকার দশা হয়েছে তাঁদের!
হুগলিতে জুটমিল-সহ বহু কল-কারখানা রয়েছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা-সহ নানা রাজ্য থেকে বহু মানুষ এখানে কাজ করতে আসেন। এঁরাই পরিযায়ী শ্রমিক।
যেমন, সনাতন বেহেরা। ডানকুনির চাকুন্দিতে লোহার পাইপ তৈরির কারখানার ঠিকাকর্মী ওই যুবক। ৮ ঘণ্টার পরিশ্রমে মজুরি মেলে ৩৪৫ টাকা। ওভারটাইমও করেন। গত চল্লিশ দিন কাজ নেই। মজুরিও মেলেনি। ভাড়াবাড়িতে বসে দুশ্চিন্তা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই তাঁর। বাড়ি ওড়িশার কেওনঝড়ে। সনাতন দুই দশক আগে এখানে আসেন।
বুধবার দুপুরে পার-ডানকুনিতে ভাড়াবাড়িতে বসে তিনি বলেন, ‘‘কোনও রকমে চলছে। কার্ড না-থাকায় রেশনের চাল-গম পাচ্ছি না। দোকানে ধার দিচ্ছে না। ঠিকাদার এক হাজার টাকা দিলেন। পরে খেটে শোধ করতে হবে। এতে ক’দিন চলে দেখি! গ্রামে স্ত্রী, তিন সন্তান, দাদা-বৌদি, ভাইপো-ভাইঝিরা আছে। টাকা পাঠাতে পারছি না।’’
বিহারের বৈশালীর যুবক রমেশ সাউ সনাতনের সহকর্মী। ডানকুনির সূর্য সেন নগরে ভাড়া থাকেন। এখানে রেশন কার্ড না থাকায় সরকারি খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার প্রশ্ন নেই তাঁরও। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনের আগে দু’টো বাচ্চাকে নিয়ে স্ত্রী এখানে এসেছে। মুশকিলে পড়েছি। কাউন্সিলর কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।’’
বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলে কাজ করেন ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ার রঘুনাথ শ্যামল। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে এখানেই সংসার। লকডাউন-পর্বের বেতন না মেলায় খুঁড়িয়ে চলছে সংসার। প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘জমানো টাকা শেষ। দোকানে ধার হয়ে গেল। ওড়িশায় ফিরতে পারলে বাঁচি। ওখানে সরকারের ভরসায় খাবারটুকু অন্তত জুটবে।’’
চালকল, ইটভাটাতেও ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা কাজ করেন। সকলেরই অবস্থা তথৈবচ। এআইইউটিইউসি-র রাজ্য সহ-সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হুগলিতে বহু পরিযায়ী শ্রমিক আটকে রয়েছেন। জুটমিলে বেতন নেই, অসংগঠিত শ্রমিকদের মজুরি নেই। গণবন্টনের চাল, গম মিলছে না। অর্ধাহারে দিন কাটছে। সরকার পাশে না দাঁড়ালে ওঁরা বাঁচবেন কী করে? ওঁদের হয় খাবার দেওয়া হোক, না হলে বাড়ি ফেরানো হোক। বিষয়টি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে জানিয়েছি।’’
চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্রের সদস্যদের অভিযোগ, হুগলিতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা কষ্টে রয়েছেন। ওই শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে ওই সংগঠন বারে বারেই রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক গত বছর রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষায় নির্দিষ্ট আইন কার্যকর করতে কেন্দ্রের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়, কিন্তু ওই পর্যন্তই!
সংগঠনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ কোথায়! ভিন্ রাজ্যের কত শ্রমিক কাজ করেন, তার তালিকা রাজ্যের কাছে থাকে না। সরকারি সুযোগ-সুবিধাও মেলে না। গোটা দেশেই এই অবস্থা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy