হাওড়া পুরনিগমের ভোট নিয়ে জটিলতা বাড়ল। শুক্রবার সর্বদল বৈঠকের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনি জটিলতা থাকায় হাওড়া পুরনিগমের ভোট নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’’ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সব দলের প্রতিনিধিরাই কমিশনকে আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছে বলে জানান কমিশনার।
কমিশন স্থির করেছে, হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে ভোট নেওয়া হবে। কিন্তু এই নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা। প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্বাচনের কী নাম হবে? কমিশনের এক কর্তা জানান, গোটা পুরনিগমের ভোট হলে তাকে সাধারণ নির্বাচন বলা যেত। এখানে তা হচ্ছে না। একে উপ-নির্বাচনও বলা যাবে না। কারণ, আইনত কোনও নির্বাচিত প্রার্থীর মৃত্যু হলে, তিনি পদ খোয়ালে বা পদত্যাগ করলে তবেই তাকে উপ-নির্বাচন বলা যায়।
কমিশনের বক্তব্য, এই ধরনের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি আগে কখনও দেখা যায়নি। অতীতে কলকাতা পুরসভার ১৪১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে তিনটি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কলকাতার ভোট হয়েছে সংযুক্তির পরেই। একই ভাবে, আসানসোল বা বিধাননগর পুরসভায় কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের পরেই নির্বাচন হয়েছে। কমিশনের ওই কর্তা জানান, ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হাওড়া পুরনিগমের ভোট হয়েছে ২০১৩ সালে। এর পরেই বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন স্থির করেছে, বিধাননগর ও আসানসোল পুরসভা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট হবে ৩ অক্টোবর। ওই দিনেই হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে বালি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডেরও ভোট হবে। অর্থাৎ, সমগ্র হাওড়া পুরনিগমের ভোট হবে না। সমস্যার সূত্রপাত এখানেই বলে মনে করছেন কমিশনের কর্তারা।
কী রকম?
প্রথমত, হাওড়ার ভোটকে ‘কী নির্বাচন’ হিসাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন? দ্বিতীয়ত, যে কোনও নির্বাচনের সীমানা বিন্যাসের সময় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে কেন্দ্রের নম্বর নির্ধারণ শুরু হয়। ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী, বালি হাওড়ার উত্তর-পূর্ব দিক। সেই হিসাবে বালিতেই ১ নম্বর ওয়ার্ড থাকার কথা। কিন্তু তা করতে হলে হাওড়া পুরনিগমের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড নম্বর বদলাতে হবে। সংরক্ষিত কেন্দ্রেরও বদল করতে হয়। অথচ আইন বলছে, কোনও জনপ্রতিনিধি এক বার নির্বাচিত হয়ে গেলে মেয়াদ শেষের আগে ‘বিশেষ কয়েকটি কারণ’ ছাড়া তাঁর ওয়ার্ড বা সীমানা বদল করা যাবে না। ওয়ার্ডের নম্বরও পরিবর্তন করা যাবে না। বিশেষ কারণ বলতে কোনও কারণে পদ চলে যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে।
হাওড়ার নির্বাচন ঘিরে এমন নানা জট কাটাতে এ দিন সর্বদল বৈঠক ডাকে কমিশন। সূত্রের খবর, বৈঠকে সমাধান সূত্রে বেরোয়নি। সব দলই কমিশনারকে পরামর্শ দিয়েছে, আইনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে। কমিশনারও জানিয়েছেন, তিনি আইনি পরামর্শ নিয়েই এগোবেন। তবে এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত হাওড়া পুরসভার সংযোজিত ১৬টি ওয়ার্ডের ভোট করা যে মুশকিল, তা প্রায় সকলেই মেনে নিয়েছেন।
এ দিনের সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূলের পক্ষে দুই মন্ত্রী অরূপ রায় ও সুলতান সিংহ, বামফ্রন্টের পক্ষে রবীন দেব এবং হাফিজ আলম সৈরানি, বিজেপি-র অসীম সরকার প্রমুখ অংশ নেন। বৈঠকে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, হাওড়া পুরনিগমে নির্বাচন হয়েছে ২০১৩ সালের নভেম্বরে। মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। কিন্তু বালির ১৬ জন কাউন্সিলার ২০১৫ সালে নির্বাচিত হলে তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০-তে। সে ক্ষেত্রে একই পুরনিগমের কাউন্সিলরদের মধ্যে দু’রকম মেয়াদ কাল থাকা কী করে সম্ভব?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy