Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

এগারোতেই জরা, ধুঁকছে  মৌড়িগ্রাম সেতু

আসলে এই রাস্তাটি কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সমান্তরাল। ফলে সেখানে চাপ বাড়লে অনেক সময়ই এই রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেয় প্রশাসন। তখন চাপ বাড়ে মৌড়িগ্রাম রেলসেতুতেও

মৌড়িগ্রাম সেতুর নীচে ফাটল। ছবি: সুব্রত জানা

মৌড়িগ্রাম সেতুর নীচে ফাটল। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০৫
Share: Save:

বয়স মাত্র এগারো। নাবালক মৌড়িগ্রাম রেলসেতু এরই মধ্যে হতশ্রী। দেখা দিয়েছে ফাটল। বটের চারা গজিয়ে উঠছে এখানেও, ভাঙা রেলিংয়ের জায়গায় বাঁশের খুঁটি ভরসা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের মৌড়িগ্রাম স্টেশনের লেভেলক্রসিং-এর যানজট এড়াতে সেতুটি চালু হয় ২০০৭ সালে। প্রায় এক হাজার ফুট লম্বা সেতুটি মৌড়িগ্রামের দুই দিকে আন্দুল রোডকে যোগ করেছে। প্রায় ৭০০ ফুট অ্যাপ্রোচ রোড। বাকি ৩০০ ফুট রয়েছে রেল লাইনের উপরে। কয়েকটি গার্ডার দিয়ে যোগ করা হয়েছে রেলের অংশ।
সেতুর নীচে এবং সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন দুইল্যা নজরুলপল্লি এবং বিদ্যাসাগরপল্লির বাসিন্দারা। তাঁরা জানালেন, রেললাইন‌ের উপরের অংশে কয়েক জায়গায় গার্ডারের দু’টি জোড়মুখ ফাঁক হয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার দু’টি গার্ডারের ফাঁকে জন্মেছে অশ্বত্থের চারা। তাদের শিক়ড় চলে যাচ্ছে গার্ডারের ফাঁক বরাবর। ঠিক যেমন দেখা গিয়েছে মাঝেরহাট সেতুতে।
কলকাতার দুর্ঘটনার পর মৌড়িগ্রাম রেলসেতুর দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল ভয়াবহ নানা ছবি। মৌড়িগ্রামের দিক থেকে সেতুতে ওঠার মুখে রেলিং ভাঙা। প্রায় ২০ ফুট ভাঙা অংশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে কোনও ক্রমে বিপদ আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অন্তত তিন মাস আগে একটি দুর্ঘটনায় রেলিং গিয়েছে। আর তা মেরামতির কথা মনে হয়নি কারও। ফাইবার শিট দিয়ে তৈরি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের ছাদও ভাঙা।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েকহাজার গাড়ি চলাচল করে। এক দিকে কিছু গাড়ি আন্দুল রোড হয়ে হাওড়া ও কলকাতা যায়। অন্য দিকে সে দিক থেকে গাড়ি আসমপুরে মুম্বইরোডে আসে। আসলে এই রাস্তাটি কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সমান্তরাল। ফলে সেখানে চাপ বাড়লে অনেক সময়ই এই রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেয় প্রশাসন। তখন চাপ বাড়ে মৌড়িগ্রাম রেলসেতুতেও।
সেতুটি তৈরি হয়েছিল রেল ও রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের যৌথ উদ্যোগে। নিয়ম মাফিক রেলের অংশ তৈরি করেছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। বাকিটা রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। কিন্তু তৈরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর নজর নেই সেতুর দিকে।
মঙ্গলবার কলকাতার দুর্ঘটনার পর মৌড়িগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, গত এগারো বছরে একবারও সেতু সংরক্ষণ বা সংস্কারের কোনও উদ্যোগ তাঁরা দেখতে পাননি। কলকাতার দুর্ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দারা জোরাল দাবি তুলছেন সেতু সংস্কারের।
তবে এ বিষয়ে রেল জানিয়েছে, সেতুটি চালু হওয়ার সময়ে স্বাক্ষরিত ‘মউ’ অনুযায়ী, রেলের জমিতে সেতুর যে অংশ রয়েছে, তার নীচের অংশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। বাকিটা, এমনকি রেল অংশের উপরিভাগের দায়িত্বও রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয়কুমার ঘোষ বলেন, ‘‘রেলের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। সামান্য ত্রুটি ধরা পড়লেও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে। তবে উপরি অংশের কথা আমরা কিছু বলতে পারব না।’’ রেল কর্তারা জানিয়েছেন, সারা দেশে এই নিয়মেই রক্ষণাবেক্ষণ চালানো হয় রেলসেতুতে। মাঝেরহাট সেতুও তার ব্যতিক্রম নয়।
রাজ্যেও আবার রয়েছে দায় ঠেলাঠেলির পালা। রাজ্য পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, এক সময়ে সেতুটি পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে ছিল। বছর খানেক হল সেটি এসেছে পূর্ত দফতরের হাতে। পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে থাকাকালীন এটির সংস্কার হয়নি বলেই এই দফতর সূত্রে জানা যায়। তবে পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, শীঘ্রই সেতুর ‘হেলথ্ অডিট’ করা হবে। যদি কোনও ত্রুটি দেখা দেয় তা মেরামতের পরিকল্পনা করা হবে। আপাতত সেতুর দুই দিকের রেলিং নতুন করে তৈরি করা হবে বলে এই দফতর
সূত্রের খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

Uralpool Bridge Mourigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE