Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
করোনার ধাক্কায় দিশাহারা গরিব বাবা-মায়েরা
Anganwadi

বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি, সঙ্কটে অপুষ্ট শিশুরা

জেলার নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে মোট ৬ হাজার ৫৭৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আওতায় তিন লক্ষের কিছু বেশি শিশু রয়েছে

অপুষ্ট শিশু কোলে এক মা। গোঘাটের কামারপুকুর অঞ্চলে মধুবাটী গ্রামে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অপুষ্ট শিশু কোলে এক মা। গোঘাটের কামারপুকুর অঞ্চলে মধুবাটী গ্রামে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কোথায় মিলবে ডিম-কলা, কোথায় হবে চিকিৎসা?

করোনা সংক্রমণ রুখতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের। কিন্তু হুগলি জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির অপুষ্ট শিশুদের বাবা-মায়েরা দিশাহারা। তাঁরা প্রায় সকলেই দিনমজুরি, খেতমজুরি বা টুকটাক কাজ করে সংসার চালান। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সন্তানদের জন্য তাঁদের কাছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রই ছিল বড় ভরসা। করোনা আবহে সেটাও গিয়েছে। মিলছে শুধু চাল-আটা-ডালের মতো খাদ্যসামগ্রী।

জেলার নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে মোট ৬ হাজার ৫৭৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আওতায় তিন লক্ষের কিছু বেশি শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত জেলায় ‘চরম অপুষ্ট’ শিশুর সংখ্যা ছিল ১৪০। ‘মাঝারি অপুষ্ট’ ছিল প্রায় ১২ হাজার।

‘চরম অপুষ্টি’তে ভোগা গোঘাটের মুকুন্দপুর আদিবাসীপাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপভোক্তা আড়াই বছরের মনসা হাঁসদা ভাল করে হাঁটতেই পারে না। তার মা লতা হাঁসদা বলেন, “শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিশেষ পুষ্টি এবং চিকিৎসার দিকটাও খেয়াল রাখা উচিত ছিল। আমরা পুষ্টিকর খাবার পাব কোথায়? চার মাস আগে আমার ছেলের ওজন নেওয়া হয়েছিল। তারপর আর হয়নি। চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি।” একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন আরও অনেক বাবা-মা। ‘পৌষ্টিক লাড্ডু’ও সব জায়গায় মিলছে না বলে অভিযোগ।

সঙ্কট গভীর, মানছেন বিভিন্ন ব্লকের শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও)-রাও। কারণ, এই চার মাসে জেলার কত শিশু নতুন করে অপুষ্ট হল, আগে যারা অপুষ্ট ছিল, তাদের অবস্থা কী— কোনও তথ্যই মিলছে না এবং এ নিয়ে কোনও নির্দেশিকাও নেই বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, সরকার অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দিলে সঙ্কটের মাত্রা কমবে। না হলে অপুষ্ট শিশুদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটা ধাক্কা খাবে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “এ নিয়ে কোনও আবেদন বা পরামর্শ পাইনি। পেলে তদন্ত করে দফতরকে জানাব।”

শিশু এবং মায়েদের পুষ্টির মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পটি চলছে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসে ওজনও নেওয়া হয়।

সিডিপিও-রা জানান, অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত হয় তার ওজন, উচ্চতা এবং হাতের দৈর্ঘ্য বিচার করে। যেমন, ১৫ মাস বয়সের শিশুর হাতের দৈর্ঘ্য ১৪-১৫ সেন্টিমিটারের কম, ওজন ৯-১০ কেজির কম এবং উচ্চতা ৭০ সেন্টিমিটারের কম হলে তাকে ‘অপুষ্ট’ বলে চিহ্নিত করা হয়। ‘চরম অপুষ্ট’-দের সংশ্লিষ্ট মহকুমার ‘পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ নিয়ে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে শিশুর অবস্থা বুঝে ১৫ দিন রেখে ওজন ১৫% বাড়িয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। অথবা উন্নততর চিকিৎসার জন্য বর্ধমান বা কলকাতার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। করোনা আবহে থমকে গিয়েছে সবই।

অন্য বিষয়গুলি:

Anganwadi Malnutrition Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy