সচেতনতা শিবিরে চাষিরা। নিজস্ব চিত্র
পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খেতে নাড়া (ধান গাছের গোড়া) পোড়ানো বন্ধের দাবিতে অনেক দিন ধরেই সরব পরিবেশপ্রেমীরা। এ বার সেই কাজে মাঠে নামল হাওড়া জেলা কৃষি দফতর। বুধবার আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের বলাইমাঝি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাষিদের নিয়ে এ জন্য একটি সচেতনতা শিবির হয়। নাড়া পোড়ানোর বিপজ্জনক দিকগুলি চাষিদের বোঝানো হয়। জেলায় এ জন্য নতুন যন্ত্র (স্ট্র বেলার) আনার কথাও বলা হয়। শিখিয়ে দেওয়া হয় তার ব্যবহার। ওই পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় আয়োজিত শিবিরে শতাধিক চাষি হাজির ছিলেন।
কৃষি-কর্তারা নাড়া পোড়ানো বন্ধের জন্য ধানের শিস কাটার পরে গাছের অবশিষ্ট অংশ কেটে কুঁচো কুঁচো করে জমিতে পুঁতে দেওয়ার পরামর্শ দেন ওই শিবিরে। তাঁদের বক্তব্য, এতে জমির উর্বরতা বাড়বে। দূষণও বন্ধ হবে। চাষিরা এ কথা মেনে নিলেও এ জন্য বাড়তি খরচের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁরা ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ওই কাজের প্রস্তাব দেন। ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে নিজেও একজন চাষি। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেই তো নাড়া পোড়াই খরচ কমানোর জন্য। কিন্তু নাড়া নষ্ট করার জন্য যে বিপুল খরচ হবে সেটা চাষিরা কী ভাবে বহন করবেন? সরকার একশো দিনের প্রকল্পে এই খরচ অন্তর্ভুক্ত করলে ভাল হয়।’’ এই প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি-কর্তারা।
রসপুর পঞ্চায়েতে প্রায় ৬০০০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়। কয়েক বছর ধরে বোরো এবং আমন— দুই মরসুমের শেষেই এখানে নাড়া পোড়ানো চলে। এ বারেও বোরো ধান কাটার পরে যে ভাবে নাড়া পোড়ানো হয়, তাতে পুরো পঞ্চায়েত এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল বলে গ্রামবাসীরা জানান। আমন মরসুমেও একই রকম দূষণের আশঙ্কা রয়েছে গ্রামবাসীর।
শিবির করা হলেও রাতারাতি নাড়া পোড়ানো যে বন্ধ করা যাবে না, তা মেনে নিয়েছেন কৃষি-কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, নাড়া পোড়ানো বিপজ্জনক প্রবণতা। দেখা গিয়েছে, এক কুইন্টাল খড় পোড়ালে ১৪৬০ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ৬০ কেজি কার্বন মনোক্সাইড, ২ কেজি সালফার-ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। তৈরি হয় মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাসও। সবগুলিই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এটা বন্ধ করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নাড়া নষ্ট করে ফেলার যন্ত্রের (স্ট্র-বেলার) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। জেলার এক কৃষি-কর্তা বলেন, ‘‘এ বার থেকে ভর্তুকিতে যাঁরা ধান কাটার যন্ত্র কিনবেন, তাঁদের স্ট্র-বেলার কেনার কথাও বলা হবে। না হলে তাঁরা ধান কাটার যন্ত্র পাবেন না।’’
কেন বেড়েছে নাড়া পোড়ানো?
চাষিরা জানান, আগে মজুররা হাতে ধান কাটার সময়ে গোড়া থেকে ধানগাছ কাটতেন। ফলে, জমিতে গাছের অবশিষ্ট অংশ পড়ে থাকত না। তাতে চাষিদের খরচ বাড়ত। কিন্তু এখন ভর্তুকিতে পাওয়া যন্ত্রে শুধু ধানের শিস কাটা হয়। বাকিটা খেতেই থেকে যায়। শুকনো হয়ে গেলে আগুন ধরিয়ে নাড়া নষ্ট করা হয়। এতে খরচ বাঁচে। কিন্তু এই প্রবণতা যে পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক, শিবিরে অনেক চাষি তা মেনে নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy