সমীরণ মিত্রের দফতরের ঘরে তালা মারা হচ্ছে। মঙ্গলবার। ছবি: তাপস ঘোষ
মঙ্গলবার ভরদুপুরে হুগলি জেলা পরিষদ ভবন। বিশেষ ভিড় নেই। নিজের ঘরে বসে হাঁক পাড়লেন কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী। এক কর্মচারি আসতেই তাঁর নির্দেশ, ‘‘এখনই অধ্যক্ষের ঘরে তালা দিয়ে এসে আমাকে চাবি দিয়ে যান। ওই ঘর কেউ যেন না খোলেন।’’ হুকুম তামিল করলেন ওই কর্মী।
জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ সমীরণ মিত্র তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে। মনোজ বললেন, ‘‘সমীরণবাবু তৃণমূলের টিকিটে জিতেছেন। পদ পেয়েছেন। অন্য দলেই যখন গেলেন, অধ্যক্ষ পদে থাকারও যুক্তি নেই। তাই, ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ মনোজের হুঁশিয়ারি, ‘‘ওঁকে আমরা জেলা পরিষদেই ঢুকতে দেব না। যে নেতার হাত ধরে দল ছেড়েছেন, তিনি যেমন বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, সমীরণবাবুরও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত।’’
সমীরণবাবু পদত্যাগ করেননি। ফলে তিনি জেলা পরিষদে এলে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া নেতা সমীরণ অবশ্য আগে আঁচিয়ে দেখতে চান। জানিয়ে দেন, ‘‘আমি পদত্যাগ করিনি। কেউ পদচ্যুতও করেননি। ফলে, বিষয়টা নিজে চোখে দেখতে চাই। কালই জেলা পরিষদে যাব। ঢুকতে না পারলে, পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবব।’’
প্রচলিত বিধি অনুযায়ী জেলা পরিষদের পঞ্চায়েত কাউন্সিলের অধ্যক্ষ পদটি রাখা থাকে বিরোধীদের জন্য। এটি মনোনিত পদ। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৫০ আসনের হুগলি জেলা পরিষদের সবক’টি আসন দখল করে শাসক দল। বিরোধী না থাকায় সমীরণবাবু অধ্যক্ষ হন। মনোজদের অভিযোগ, এই দু’বছরে সমীরণবাবু অধ্যক্ষ হিসেবে ব্যর্থ। কোনও কাজ তাঁর নেতৃত্বে হয়নি। অধ্যক্ষকে ছাড়াই দিন কয়েকের মধ্যে একটি পঞ্চায়েতে পরিদর্শনে যাওয়া ঠিক হয়েছে বলে তিনি জানান।
অভিযোগ মানছেন না সমীরণবাবু। তাঁর দাবি, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে পরিদর্শন করা হয়েছে। সেই রেকর্ড জেলা পরিষদেই রাখা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘কাউন্সিলের সদস্য বা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরাও তো এই প্রক্রিয়ায় ছিলেন। করোনার জন্য প্রক্রিয়া থমকে যায়। তবে, পরিদর্শনে কী পাওয়া গিয়েছিল, তা প্রকাশ করার মতো মাথা আমার ঘাড়ে ছিল না। এখন বলব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পদত্যাগ করিনি দু’টো কারণে। প্রথমত, তেমন নির্দেশ পাইনি। দ্বিতীয়ত, এটা তো বিরোধী পদ। আমি তো এখন বিরোধী! তা ছাড়া, অন্য দল ছেড়ে যারা তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁরা সবাই পদত্যাগ করেছেন!’’
সমীরণবাবু হরিপালের নেতা। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই ব্লকে জায়গা না পেয়ে তিনি আরামবাগে দাঁড়িয়ে জেতেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বারে বারেই তিনি অভিযোগ জানান, গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হয়ে হরিপালে দল করতে পারছেন না। শেষে দল ছাড়েন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বললেও সমীরণবাবু সিদ্ধান্ত বদলাননি।
জেলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ অবশ্য সমীরণবাবুর উপরে সহানুভূতিশীল। তাঁদের বক্তব্য, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই নেতা দল ছাড়ায় হরিপালে দলীয় সংগঠনে প্রভাব পড়বে। সমীরণবাবু বলছেন, ‘‘তৃণমূল আমার জন্য অতীত। এখন বিজেপির জন্য সর্বশক্তি দেব। তৃণমূলে আমার মতো যাঁরা বঞ্চিত এমন অনেকে যোগাযোগ করছেন। তাঁরা বিজেপিতে আসবেন।’’
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল ছাড়লে এমন দাবি সবাই করেন। বাস্তব হল, তৃণমূলে যাঁরা আছেন, প্রত্যেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়ায় সুরক্ষিত আছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy