Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সেতুর সংস্কার শুরু রাউতাড়ায়

বিকল্প রাস্তা না থাকায় ক্ষোভ

মেরামতির কাজ চলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেতু। আর তাতেই বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা আগে থেকে না করেই সেতু মেরামতির কাজ শুরু করায় ভোগান্তির জন্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁরা। ছবিটি হাওড়ার জয়পুরের রাউতাড়ার।

খানাখন্দে ভরা বিকল্প রাস্তা। -সুব্রত জানা

খানাখন্দে ভরা বিকল্প রাস্তা। -সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

মেরামতির কাজ চলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেতু। আর তাতেই বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা আগে থেকে না করেই সেতু মেরামতির কাজ শুরু করায় ভোগান্তির জন্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁরা। ছবিটি হাওড়ার জয়পুরের রাউতাড়ার।

এলাকায় মজা দামোদরের উপরে সেতুটি দীরর্ঘদিন ধরেই জীর্ণ অবস্থায়। সম্প্রতি সেটির মেরামতির কাজে হাত দেয় পূর্ত (সড়ক) দফতর। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। মেরামতির কাজের জন্য গত ২ নভেম্বর থেকে সেতু দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাওড়া ও হুগলির মধ্যে যোগাযোগের দিক থেকে সেতুটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেতু পার হয়ে জয়পুরের মুচিঘাটা পর্যন্ত আসা যায় রাজ্য সড়ক ধরে। মুচিঘাটা থেকে আবার যাওয়া যায় হুগলির খানাকুলের বিভিন্ন জায়গায়। খানাকুলের বহু মানুষ মুচিঘাটা-আমতা সড়ক ধরে কলকাতা ও শহরতলিতে যাতায়াত করেন।

হাওড়া-ঝিখিরা এবং মুচিঘাটা-করুণাময়ী রুটের বাস এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। আমতা-মুচিঘাটা রুটে ছোট গাড়িও সেতু দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে। কিন্তু সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসগুলি রাউতাড়ায় দাঁড়িয়ে পড়ছে। ছোট গাড়ির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফলে যে সব যাত্রী মুচিঘাটা বা খানাকুলে যাবেন তাঁরা পড়ছেন অসুবিধায়। কারণ, তাঁদের হেঁটে সেতু পার হয়ে এ পারে অন্য বাস বা গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এতে বেশি খরচের পাশাপাশি তাঁদের হয়রানিও হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই পথে নিত্য যাতায়াত করা মানুষজন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ দেখা হল খানাকুলের পলাশপাই-এর বাসিন্দা অর্পণ বেরার সঙ্গে। মুচিঘাটা পর্যন্ত সাইকেলে এসে হেঁটে সেতু পার হয়ে উল্টো দিকে আমতার ছোট গাড়ি ধরবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমতা থেকে বাসে কলকাতা যাব। সেতু বন্ধ থাকায় দুবার গাড়ি পাল্টাতে হচ্ছে। খরচের কথা তো ছেড়েই দিলাম। হয়রানিও কম হচ্ছে না।’’

রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর সূত্রে খবর, ১২০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া কংক্রিটের সেতুটি খুবই পুরনো। দিনে কয়েকহাজার গাড়ি সেতু দিয়ে পারাপার করে। সেতুর কিছু অংশ জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। সংস্কার না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।

চলছে সেতুর মেরামতি।-সুব্রত জানা

বাসিন্দারা জানান, গুরুত্বপূর্ণ কোনও সেতু মেরামত করা হলে তার একদিক ফাঁকা রেখে অন্য দিকে কাজ করা হয়। বাস না হলেও, মোটরবাইক এবং ছোট গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশনের কর্তাদের পাল্টা বক্তব্য, সেতুটি যথেষ্ট চওড়া নয়। ফলে ওই ভাবে কাজ করা সম্ভব ছিল না। পাশেই রাউতাড়া এবং ঘরডুবরা গ্রামের ভিতর দিয়ে বিকল্প রাস্তা রয়েছে। মজা দামোদরের উপরে অন্য একটি সেতু আছে। সেই রাস্তা ও সেতু দিয়ে যাতাযাত করা যায়।

যদিও বিকল্প ওই রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়েও নাকাল হতে হচ্ছে মানুষকে। ইটের রাস্তার পুরোটা খানাখন্দে ভর্তি। অন্য যে সেতুটি আছে সেটি বড় জোর ১০ ফুট চওড়া। এই রাস্তা এবং সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে কয়েক হাজার ভ্যানো, মোটরবাইক, ভ্যানরিকশা। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বাগ, নমিতা বাগ বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েই সব গাড়ি চলাচল করছে। একটি গাড়ি উল্টে গিয়ে নলকূপটি ভেঙে গিয়েছে। আমরা পানীয় জল পাচ্ছি না।’’ তাঁদের প্রশ্ন, এই রাস্তাটিকে যদি বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছিল তা হলে পূর্ত দফতর গর্তগুলি বোজানো হল না কেন?

পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাওড়া ডিভিশনের এক কর্তা জানান, সেতুর সংস্কারে হাত দেওয়ার আগে স্থানীয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এই অসুবিধা যে হতে পারে সে বিষয়ে তাঁদের আগাম জানানো হয়েছিল। জেলা পরিষদের সদস্য রমেশ পাল বলেন, ‘‘ঘরদুধরা এবং রাউতাড়া এই দুটি গ্রামের ইটের রাস্তায় খানাখন্দ মেরামতির জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় কাজ করা যায়নি। এখন গাড়ি চলায় রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজ করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা হচ্ছে সমস্যা মেটানোর।’’ আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র সেতুর মেরামতির কাজ দ্রুত ষেষ করার দাবি জানিয়েছেন।

পূর্ত (সড়ক) দফতরের আশ্বাস, আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে সেতুটি পুরোদমে চালু করার চেষ্টা চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Renovation Jaypur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE