প্রস্তুতি: ধাড়াপাড়ায় তাপস পালের পৈতৃক বাড়ি।
ঝড়ঝাপ্টা কম আসেনি জীবনে। গত কয়েক বছরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিল বিতর্ক। কিন্তু চন্দননগরবাসীর অনেকের কাছেই তাপস পাল প্রাণচঞ্চল, আড্ডাবাজ এক যুবকের নাম। যাঁদের কাছে এলে তাঁর পেশাদারিত্বের আবরণ খসে যেত। প্রিয় অভিনেতা তথা পড়শির মৃত্যুতে সেই স্মৃতিই হাতড়াচ্ছেন শহরের ধাড়াপাড়ার বাসিন্দারা।
১৯৫৮ সালে ধাড়াপাড়াতেই তাপসের জন্ম। বাবা জগদীশ পাল ছিলেন চিকিৎসক। তাপসেরা ছিলেন এক ভাই, চার বোন। স্থানীয় প্রবর্তক বিদ্যার্থী ভবন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তাপস। উচ্চ মাধ্যমিক দেন কানাইলাল বিদ্যামন্দির থেকে। এর পরে হুগলি মহসিন কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। সেই সময়ের পড়শিরা জানালেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালবাসতেন তাপস। ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল চার জনের সঙ্গে। চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে জমে উঠত পাঁচ বন্ধুর আড্ডা। সব জায়গাতেই তাঁদের একসঙ্গে দেখা যেত। অন্যদের কাছে তাঁদের পরিচিতিই হয়ে গিয়েছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’। পরে কর্মসূত্রে অনেকেই নানা জায়গায় ছড়িয়ে যান।
বন্ধুরা জানালেন, ছোটবেলা থেকেই তাপসের অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাপসের থিয়েটার জগতে প্রবেশ। তার পরে ডাক পড়ে সিনেমায়। সেখানে অভিনয় নিয়েও রীতিমতো আলোচনা চলে পাঁচ বন্ধুর। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই ‘অডিশন’ দিতে যান তাপস। প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তি’। পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম অভিজিৎ নিয়োগী বলেন, ‘‘প্রথম ছবির শুটিংয়ের জন্য কিছু না জানিয়েই আমাকে স্টুডিয়োতে নিয়ে গিয়েছিল। ওই সিনেমায় গলাজলে দাঁড়িয়ে থাকার একটা দৃশ্য ছিল। কিন্তু তাপস সাঁতার জানত না। সেই জন্য আমাদের পুকুরে সাঁতার শিখেছিল। প্রথম ছবিতেই অভিনয়ে বাজিমাত করেছিল আমাদের বন্ধু। আমাদের বুক গর্বে ফুলে গিয়েছিল।’’ প্রথম ছবির সাফল্যের পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাপসকে। তাঁর পরে একের পর এক সিনেমা হিট। অভিজিৎ জানান, ব্যস্ততার মাঝেও তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছিলেন ‘বিখ্যাত’ বন্ধু।
অপর এক বন্ধু প্রকৃতি ঘোষও বন্ধু-বিয়োগের দিনে স্মৃতিতে ডুব দেন। বলেন, ‘‘ভালবাসা ভালবাসা ছবির শুটিংয়ের জন্য কাকভোরে ওকে বাড়ি থেকে বেরোতে হত। প্রথম ট্রেন ধরানোর জন্য সাইকেলে চাপিয়ে ওকে চন্দননগর স্টেশনে পৌঁছে দিতাম। কাজের চাপ বাড়তে থাকায় পরে কলকাতায় থাকতে শুরু করে।’’
১৯৮৫ সালে তাপস বিয়ে করেন। এর মধ্যে বাবার মৃত্যু হয়। তাপস পারিবারিক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। অনেক পরে রাজনীতিতে প্রবেশ। বিধায়ক, সাংসদ হন। সাংসদ থাকালীন অবস্থাতেই রোজ ভ্যালি মামলায় গ্রেফতার হন। স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
পঞ্চপাণ্ডবের আর এক জন শান্তনু পাল বলেন, ‘‘তাপস অভিনয়ে সফল হওয়ায় সকলের কাছে আমাদের কদরও যেন বেড়ে গিয়েছিল! গত বছরের মার্চ মাসে আমার বাড়িতে অন্নপূর্ণা পুজোয় এসেছিল। আগামী এপ্রিল মাসে ফের আসবে বলেছিল। প্রতি সপ্তাহে ফোনে কথা হত। ওর শরীরের খোঁজ নিতাম। সেই অভ্যাসে এ বার ছেদ পড়ল।’’ অভিজিৎ বলেন, ‘‘তাপসের মৃত্যুর খবরে আজ ঘুম ভাঙল। গত কয়েক বছরে ওর জীবনে অনেক ঝড় এসেছিল। তা সহ্য করতে না পেরেই অকালে চলে গেল।’’ দাদার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তাপসের বোন, চন্দননগর পালপাড়ার বাসিন্দা পাপিয়া বায়েন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাপসের পৈতৃক বাড়িতে এখন কেউ থাকেন না। এ দিনও বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। প্রতিবেশী প্রণতি বসু বলেন, ‘‘তাপস আর ওর বাবার স্মৃতিতে এই বাড়িতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা সেবাকেন্দ্র তৈরি করলে ভাল হয়।’’ এমনটা চান আরও অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy