গ্রেফতার রাবেয়া বেগম।—নিজস্ব চিত্র।
ব্যাঙ্ককর্মী পার্থ চক্রবর্তী খুনের তদন্তে মূল অভিযুক্ত শেখ সামসুদ্দিনের স্ত্রী, মা এবং দাদা-বৌদিকেও গ্রেফতার করল পুলিশ।
ডোমজুড়ের কাটলিয়ার বাসিন্দা, সামসুদ্দিন এবং তার বাবা মুনসুর আলিকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের নিয়ে বুধবার ঘটনার পুনর্নির্মাণের পরে গ্রেফতার করা হল সামসুদ্দিনের স্ত্রী রোজিনা বিবি, মা জেবউন্নেসা বেগম, দাদা শেখ জসিমউদ্দিন এবং বৌদি রাবেয়া বেগমকে। পুলিশের দাবি, ওই চার জনও খুন এবং প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত। তারা সে কথা কবুল করেছে।
কী ভাবে?
পুলিশের দাবি, পুনর্নির্মাণের সময়ে ধৃত বাবা-ছেলে সে দিনের (৩০ অগস্ট) গোটা ঘটনাটি জানায়। ওই দিন পার্থর দেহ ছয় টুকরো করার আগে তা নিজের সেলাইঘরে একটি মাদুরে রাখে সামসুদ্দিন। সেই মাদুর রোজিনা এনে দিয়েছিল। দেহটি কাটা হয়ে গেলে তা প্লাস্টিকে মোড়ার সময়ে সামসুদ্দিন এবং মুনসুরের হাতে যাবতীয় উপকরণ জুগিয়ে দেয় রোজিনা, জেবউন্নেসা এবং রাবেয়া। সামসুদ্দিনের দাদার দায়িত্ব ছিল,সেই সময়ে বাইরের কেউ যাতে ঘরে না ঢোকে, তা দেখা।
দু’টি প্লাস্টিকে মোড়া পার্থর দেহাংশ নিয়ে সামসুদ্দিন বেরিয়ে যাওয়ার পরে ফিনাইল ও শ্যাম্পু দিয়ে মেঝে থেকে রক্ত মুছে ফেলার কাজটিও করে ওই তিন মহিলা। রক্তমাখা মাদুরটি তারা ফেলে দেয় বাড়ির পাশের পুকুরে। রাতে সেপটিক ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে ভিতরে ফেলে দেওয়া হয় পার্থর টাকার খালি ব্যাগ, ক্যালকুলেটর, ব্যাঙ্কের রেজিস্টার এবং পরিচয়পত্র। শাবল দিয়ে ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলতেও সামসুদ্দিনকে সাহায্য করে পরিবারের সদস্যরা। দেহাংশ ফেলে আসার পরে ওই বিকেলেই সামসুদ্দিনকে নিয়ে পরিবারের সকলে একটি গোপন বৈঠক করে। সেখানে ঠিক হয় সামসুদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য ঘটনার কথা কাউকে বলা হবে না।
গ্রেফতার: রোজিনা বিবি (বামদিকে) জেবউন্নেসা বেগম (ডানদিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সামসুদ্দিন ধরা পড়ার পরে তার বাবা-সহ পরিবারের সকলে ঘটনার কথা কিছুই জানে না বলে দাবি করেছিল। এখন জানা যাচ্ছে, তারা মিথ্যা বলেছিল। ধৃত চার জনকে বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সলপ শাখার ‘ডোর ব্যাঙ্কিং অফিসার’, চাকদহের বাসিন্দা পার্থ ৩০ অগস্ট সকালে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পাওনা টাকা নিয়ে গোলমালের জেরে পেশায় দর্জি সামসুদ্দিন ওই ব্যাঙ্ককর্মীকে নিজের সেলাইঘরে খুন করার পরে দেহটি ছয়টি খণ্ড করে। তারপরে দু’টি আলাদা প্লাস্টিকে দেহাংশ মুড়ে ফেলে আসে রাঘবপুর এবং অঙ্কুরহাটিতে। দু’দিনের মাথায় পুলিশ সামসুদ্দিনকে গ্রেফতার করে। তার পরে ধরা হয় তার বাবাকেও। পর পর উদ্ধার হতে থাকে খুন এবং প্রমাণ লোপাটের কাজে ব্যবহৃত সব জিনিস।
বুধবার দুপুরে ডোমজুড়ের আইসি সুবীর রায় এবং হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) শান্তি সেন ধৃত সামসুদ্দিন ও তার বাবাকে নিয়ে কাটলিয়ায় ওই বাড়িতে যান ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য। সামসুদ্দিন পুলিশকে দেখিয়ে দেয়, কী ভাবে সে নিজের সেলাইঘরে ঢুকিয়ে পার্থর মাথায় খিল দিয়ে আঘাত করে। তখনই তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সেই সময়ের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান তদন্তকারীরা। জেরায় বাবা-ছেলে ভেঙে পড়ে। ওই বাড়ি থেকে পুলিশ শাবল এবং পাশের পুকুর থেকে রক্তমাখা মাদুরটি উদ্ধার করেছে। পরে দু’জনকে থানায় এনে পরিবারের সদস্যদের মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হয়। রোজিনারাও অপরাধের কথা কবুল করে বলে পুলিশের দাবি। ওই বাড়িটি ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাকড়দহ মোড়ের একটি দোকানের পিছনের ঝোপ থেকে পুলিশ পার্থর সাইকেলটি উদ্ধার করে। মুনসুর সাইকেলটি ওই জায়গায় লুকিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের লোকজন ইতিমধ্যেই ওই বাড়িতে গিয়ে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy